অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও জনআস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসব পদক্ষেপের ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে, ঈদ ও পূজা-পার্বণে মানুষ নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে পেরেছে এবং জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
জনআস্থা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সরকার সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন, পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ ও পিআরবি সংশোধন, বিশেষায়িত ইউনিটের বিধিবিধান হালনাগাদ, যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন, বিশেষায়িত ইউনিটগুলো (বিশেষ শাখা, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই ইত্যাদি) ও ৯৯৯ সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং এপিবিএনের অপারেশনাল ও মানবসম্পদ শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আইনি কাঠামো সংস্কার, জবাবদিহিতা, সাংগঠনিক সক্ষমতা ও কল্যাণমূলক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। জনসেবাকে আরও সহজ করতে অনলাইন জিডি সেবা চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের থানায় চালু হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে।
বিজিবি নিয়োগ কাঠামো সংস্কার করে ন্যূনতম স্নাতক পাস প্রার্থীদের জুনিয়র কর্মকর্তা পদে নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে বিওপিগুলোকে স্ট্রং পয়েন্ট বিওপিতে উন্নীত করা, ড্রোন ও সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম সংযোজন, প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র সরবরাহ, এবং মাদক ও চোরাচালান দমনে দ্রুত বিচার ব্যবস্থার আওতায় মামলা নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব-নীতিমালা সংস্কার, ১০৯ ইউনিটের মধ্যে ৯৩টির ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন, এবং টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডে নতুন পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে, জরুরি পরিষেবা শর্ট কোড চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্য জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-এর আইন প্রণয়ন, নাম পরিবর্তন ও সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, পুলিশ আইন সংশোধন, অবকাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি, এবং জাতিসংঘ নীতিমালা অনুসারে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হবে।
এসব উদ্যোগের ফলে দক্ষতা, জবাবদিহিতা ও জনবান্ধব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পাঠকের মন্তব্য