![]()
রাজধানীর অন্যতম জনবহুল এলাকা মহাখালীর কড়াইল বস্তি আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত হলো। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে শত শত ঘর ছাই হয়ে গেছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো মানুষ। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েই কাটাতে হচ্ছে তাদের প্রথম রাতটি। যে ঘরগুলো ছিল দিনের পর দিন রক্ত–ঘামের বিনিময়ে গড়ে তোলা—সেই ঘর, সেই সংসার আজ মুছে গেছে মুহূর্তেই।
“আমার ঘর পুইড়া গেছে… পোলারে নিয়াই যামু কই?”
বস্তির ভেতর ছাই–ভস্ম হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে, যদি কোনো মূল্যবান জিনিস পাওয়া যায়। কারও চোখে হতাশা, কারও চোখে শূন্যতা—সবার মুখে একটাই প্রশ্ন:
“এখন কোথায় যাব?”
রেখা বেগম, ২ বছরের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে, উদভ্রান্তের মতো ঘুরছিলেন। কাঁপা গলায় বললেন,
“আমার ঘর পুইড়া গেছে। পোলারে নিয়া যামু কই, কিছুই জানি না!”
বাড়ি–বাড়িতে কাজ করা রেখার জন্য এই বস্তির ছোট ঘরটিই ছিল জীবনের একমাত্র সম্বল।
তার মতোই সুমি বেগমও ছিন্নমূল অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেন,
“আমগর পাশাপাশিই ঘর আছিল। সব পুইড়া শ্যাষ। এহন কই শোব?”
রিকশাচালক স্বামীকেও এখনো খুঁজে পাননি সুমি। কে কোথায় আছে, বেঁচে আছে কি না—অনেকেরই সেই উত্তর জানা নেই।
৫০০–৬০০ ঘর সম্পূর্ণ পুড়েছে; আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১,৫০০
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া বিভাগের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান,
-
৫০০–৬০০ ঘর সম্পূর্ণ ছাই
-
১,৫০০ ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত
বস্তির ভেতর সীমিত প্রবেশ–পথ, জনসমাগম এবং সরু গলির কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা
কড়াইল বস্তির আগুনে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন,
“ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুঃখ–কষ্ট আমাদের সবার। পুনর্বাসনে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।”
তিনি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুততর করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগুনের কারণ অনুসন্ধানে কার্যকর তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামে আরও একটি অগ্নিকাণ্ড
কড়াইলের ভয়াবহতার মধ্যেই মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার গুদামে আগুন লাগে।
৪টি ইউনিট কাজ করছে, কিন্তু রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানান সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন।
গতকালই সেখানে কদমতলীতে আরেকটি কম্বলের গুদামে আগুন লেগেছিল—যা শহরজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য