![]()
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়া–পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বন্দরমুখী টোল সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতা-কর্মীরা। টোল সড়কটি ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের মূল প্রবেশপথ যুক্ত করে। এর ফলে প্রায় এক ঘণ্টা সড়কটি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে এবং কনটেইনারবাহী যানবাহন নগরের ভেতর দিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করতে বাধ্য হয়।
শ্রমিকদের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ইছহাক ডিপো–সংলগ্ন টোল প্লাজার অদূরে শতাধিক শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এতে টোল সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ এগিয়ে আসে। প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা শেষে পুলিশের আশ্বাসে সকাল সোয়া ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন স্কপের নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দর অঞ্চলের উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,
“শ্রমিকেরা টোল সড়কে অবরোধ করেছিলেন। বন্দর সচল রাখার স্বার্থে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানো হয়েছে। পরে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।”
বিদেশিদের ইজারা চুক্তির বিরোধিতা
বিদেশিদের কাছে লাভজনক টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্কপ জানিয়েছে, এনসিটি টার্মিনাল জনগণের সম্পদ, এবং এটিকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলনে আজকের এই অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিলেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
স্কপ নেতাদের অভিযোগ,
-
লালদিয়া টার্মিনালের চুক্তির তথ্য গোপন রাখা হয়েছে,
-
সরকারের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে এনসিটি বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে,
-
বন্দরের মালিকানা ও পরিচালনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জনগণের অজান্তে নেওয়া হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন,
“বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বন্দর অচল করে দেওয়ার সক্ষমতা শ্রমিকদের আছে। তবে আমরা আলোচনার সুযোগ দিচ্ছি।”
হালিশহরে প্রতীকী অবরোধ
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টার দিকে নগরের হালিশহর বড়পুল এলাকায় স্কপ প্রতীকী অবরোধ পালন করে। এতে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো ও বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থন জানায়। সেখানে আয়োজন করা সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো বাতিলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আদালতের রায় ৪ ডিসেম্বর
এদিকে, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদনের ওপর হাইকোর্ট আগামী ৪ ডিসেম্বর রায় দেবেন।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা এই রিট আবেদনটি করেছে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন।
বন্দর পরিচালনার পটভূমি
২০০৭ সালে ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এনসিটি টার্মিনাল, যা চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার পরিবহনের অন্যতম ব্যস্ততম টার্মিনাল।
-
দীর্ঘদিন এটি পরিচালনা করেছে সাইফ পাওয়ারটেক,
-
চলতি বছর ৬ জুলাই তাদের চুক্তি শেষ হলে দায়িত্ব দেওয়া হয় চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেডকে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বর্তমানে সেই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান।
এর পাশাপাশি—
-
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য ইজারা পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস।
-
পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডলগ এসএ–কে।
এই সিদ্ধান্তগুলোর বিরোধিতায় শ্রমিক সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য