![]()
চার বছর ধরে চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝে নতুন করে আলো জ্বলতে পারে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে কিয়েভ। যুদ্ধের অবসান এবং মানবিক বিপর্যয় থামানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সাধারণ বোঝাপড়া’ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছে ইউক্রেন। এই নতুন অগ্রগতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশা সৃষ্টি করলেও, একইসঙ্গে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ ও কৌশলগত সংশয়।
যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে কিয়েভকে একটি ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা দেয়, যা নিয়ে জেনেভায় দুই দেশের কর্মকর্তারা যৌথভাবে আলোচনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, মূল পরিকল্পনাটি উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে আরও পরিমার্জিত হয়েছে। তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে আগামী সপ্তাহে মস্কো পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন—যেখানে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের অংশ হিসেবে এই সপ্তাহেই কিয়েভ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউস জেলেনস্কি–ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
মস্কোর সন্দেহ ও সতর্কতা
ক্রেমলিন আগেই জানিয়েছে তারা নতুন খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা করেনি এবং কিছু সংশোধনী গ্রহণ নাও করতে পারে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন এলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তারা শান্তি পরিকল্পনার নতুন কোনো কপি পায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষ্য মতে, ইউরোপ এই শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
শান্তি আলোচনার মানবিক মাত্রা
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার সৈন্য ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। লাখো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার মতো অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য এখনো অমীমাংসিত।
জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলোকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বড় বাধা। মস্কোও পূর্ব ডনবাস থেকে সম্পূর্ণ ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আলোচনার মাঝেও হামলা অব্যাহত
শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চললেও, যুদ্ধক্ষেত্রে সহিংসতা থামেনি। মঙ্গলবার রাতেও জাপোরিঝিয়ায় দুই পক্ষ হামলার অভিযোগ করেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অন্তত সাতজন আহত হয়েছে এবং বহু এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
ইউরোপের সতর্ক দৃষ্টি
হোয়াইট হাউস আশাবাদী হলেও ইউরোপীয় নেতারা এখনো সন্দিহান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো সদিচ্ছা দেখছেন না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা ভার্চুয়াল বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে শান্তিচুক্তি হলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।
জেলেনস্কির আহ্বান
জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত এবং নভেম্বরের মধ্যেই এমন বৈঠকের লক্ষ্য রয়েছে। তার মতে, শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।
মানবিক সংকট থামানো এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এই আলোচনা—যদিও দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য