বাংলাদেশের শিল্প খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Handa New Material Technology Co. Ltd. ঘোষণা দিয়েছে, তারা বাংলাদেশে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো তাদের বিদেশি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা শুধু শিল্প উৎপাদন নয়, বরং দেশে টেকসই কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (BEZA)-এর সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং কারখানাটি স্থাপিত হবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের একটি নির্ধারিত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে। রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় শ্রমিক ও পণ্যের সহজ চলাচল, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ এবং বন্দর সুবিধা—সব মিলিয়ে এই অঞ্চলকে বিনিয়োগের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বিবেচনা করা হচ্ছে।
হান্ডা মূলত আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল উপাদান উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ, যার মধ্যে রয়েছে স্টেইনলেস স্টিল উপাদান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উপকরণ এবং ন্যানো-টেকনোলজি ভিত্তিক উপকরণ। এসব পণ্যের উৎপাদনের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পখাতের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
প্রকল্পের প্রথম ধাপে প্রায় ৩,০০০ জনের কর্মসংস্থান হবে এবং সম্পূর্ণ কারখানা চালু হলে এই সংখ্যা ৭,০০০ ছাড়িয়ে যাবে। স্থানীয় শ্রমিকদের আধুনিক শিল্প প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দিতে হান্ডা একটি ট্রেনিং ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গড়ে তুলবে, যা তরুণদের জন্য ব্যতিক্রমী ক্যারিয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
কোম্পানিটি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য বেছে নেওয়ার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ উল্লেখ করেছে—স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ, সরকারি প্রণোদনা ও কর ছাড়, বিশ্ববাজারে রপ্তানি সুবিধা (EU GSP, UK DCTS), সাশ্রয়ী শ্রমশক্তি এবং উন্নত অবকাঠামো। হান্ডার সিইওর ভাষায়, “বাংলাদেশ এখন এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হাব। এখানে আমাদের বিনিয়োগ কেবল একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়—এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের সূচনা।”
এই বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক লাভই নয়, বরং হংকং-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বেসরকারি বিনিয়োগ বোর্ড (BIDA) এবং BEZA আশা করছে, এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিও বাংলাদেশের প্রতি আরও বেশি আস্থা দেখাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হান্ডার এই উদ্যোগ রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদেশি কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমানো, স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক জোট গঠনে সহায়ক হবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশকে আরও হাই-টেক ও ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি আকৃষ্ট করার জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
সব মিলিয়ে, হান্ডার ২৫০ মিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক আস্থার প্রতিফলন। সরকারি সহযোগিতা, দক্ষ মানবসম্পদ এবং সময়োপযোগী পরিকল্পনার সমন্বয়ে এই প্রকল্প দেশের শিল্প খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এবং বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক শিল্প ও রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে সহায়তা করবে।
পাঠকের মন্তব্য