![]()
বিশ্বব্যাপী রূপচর্চার দুনিয়ায় নতুন একটি নাম দ্রুত উঠে এসেছে—পলিনিউক্লিওটাইড ইনজেকশন, যাকে অনেকে মজা করে বলছেন “স্যামন স্পার্ম ফেসিয়াল”। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকাদের খোলামেলা আলোচনার পর এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেন হঠাৎ বেড়ে গেছে।
চার্লি এক্সসিএক্স, কিম কারদাশিয়ান, ক্লোই কারদাশিয়ান থেকে শুরু করে জেনিফার অ্যানিস্টন—বিভিন্ন সেলিব্রিটি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে তারা ত্বক পুনরুজ্জীবনে পলিনিউক্লিওটাইড ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে চার্লি এক্সসিএক্স যখন তার ৯০ লাখ ইনস্টাগ্রাম অনুসারীকে বললেন—**“ফিলার পুরনো, এখন পলিনিউক্লিওটাইড আমার ভিটামিন”—**তখনই সারা পৃথিবীতে আলোচনায় আসে এ পদ্ধতি।
পদ্ধতিটি কী? কেন এত আলোচনা?
পলিনিউক্লিওটাইড মূলত স্যামন বা ট্রাউট মাছের শুক্রাণু থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ-র ছোট ছোট টুকরো, যা ত্বকের নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। গবেষকরা বলছেন, মানুষের ডিএনএ ও মাছের ডিএনএ-র মাঝে গঠনগত কিছু মিল থাকায় এটি ত্বকের কোষকে জাগিয়ে তোলে।
ফল—
-
নতুন কোলাজেন উৎপাদন,
-
ইলাস্টিন বৃদ্ধি,
-
ত্বক টানটান হওয়া,
-
দাগ কমে যাওয়া,
-
এবং ত্বককে উজ্জ্বল দেখা।
মানুষের প্রত্যাশা: ‘জাদুর ফল’
ম্যানচেস্টারের একটি ক্লিনিকের রোগী ২৯ বছর বয়সী অ্যাবি ব্রণের দাগ ও লালচে ভাব দূর করতে এই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার ভাষায়—“আমি শুধু সমস্যার জায়গাগুলো ঠিক করতে চাই।”
তার মতো আরও অনেক ব্যবহারকারী বলছেন, কয়েক সপ্তাহ পরই ত্বক আগের তুলনায় আর্দ্র, মসৃণ এবং উজ্জ্বল মনে হয়।
চিকিৎসক হেলেনা ডঙ্ক বলেন—
“গত ১৮ মাসে পলিনিউক্লিওটাইডের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে এখন আমার অর্ধেক রোগী এটি নিতে আসেন।”
কিন্তু খরচ? বেশ চড়া
একটি সেশনে খরচ হয়—
২০০–৫০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ৩০,০০০–৭৫,০০০ টাকা)।
পরপর তিনটি সেশন নিতে হয়, তারপর প্রতি ৬–৯ মাস পর রিচার্জ সেশন।
সমস্যা ও ঝুঁকির গল্পও কম নয়
যেখানে তারকারা এটি নিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, সেখানে কিছু ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ভয়াবহও হয়েছে।
নিউইয়র্কের ৩১ বছরের শার্লট বিকলি বিয়ের আগে উজ্জ্বল দেখানোর জন্য পলিনিউক্লিওটাইড ইনজেকশন নিয়েছিলেন। পরিণতি—
-
ইনফেকশন,
-
ত্বক ফুলে যাওয়া,
-
কালো দাগ আরও বেড়ে যাওয়া,
-
এবং মানসিক ভোগান্তি।
তিনি বলেন—
“আমার যা হওয়ার কথা ছিল, হয়েছে ঠিক তার উল্টো। এখনো আমার চোখের নিচে দাগ রয়ে গেছে।”
এরকম সমস্যার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
-
ইনজেকশনের গভীরতা ভুল হওয়া,
-
প্রশিক্ষণহীন কর্মীর দ্বারা চিকিৎসা,
-
নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার,
-
এবং অ্যালার্জির ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা: ‘জাদু নয়, এখনো প্রমাণ অসম্পূর্ণ’
অস্ট্রেলীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জন প্যাগলিয়ারো প্রশ্ন তুলেছেন—
“মাছের ডিএনএ ছোট ছোট টুকরো করে মুখে দিলে তা আসলেই কাজ করবে—এমন কোনো শক্ত প্রমাণ কি আছে?”
তার মতে—
“এটা এখনও গবেষণার প্রাথমিক স্তরে। নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার ব্যাপারে আরও বড়, দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন।”
ব্রিস্টিশ কলেজ অফ অ্যাসথেটিক মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট ডা. সোফি শটার বলেন—
“এটি অনেকের জন্য কাজ করে, কিন্তু সব সমস্যার সমাধান নয়। রূপচর্চায় আরও অনেক পরীক্ষিত পদ্ধতি আছে।”
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার—বড় উদ্বেগ
যুক্তরাজ্যে এটি মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে নিবন্ধিত হলেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ এখনো অনুমোদন দেয়নি। সেভ ফেস সংস্থার পরিচালক অ্যাশটন কলিন্স বলছেন—
“নিয়ন্ত্রণের অভাবে বাজারে ভেজাল বা পরীক্ষাহীন পণ্য ঢুকে পড়ছে—এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়।”
অবশেষে প্রশ্ন—এটি কি সত্যিই ‘বিউটি রেভলিউশন’?
পলিনিউক্লিওটাইড নিঃসন্দেহে রূপচর্চার নতুন ট্রেন্ড। কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো, কিছু মানুষের খুব খারাপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে—
এটি ‘মিরাকল কিউর’ নয়; বরং ভালো প্রয়োগে ভালো ফল দিতে পারে, খারাপ প্রয়োগে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
সুতরাং হুজুগ নয়—
-
প্রশিক্ষিত চিকিৎসক,
-
মানসম্পন্ন পণ্য,
-
স্বাস্থ্য পরীক্ষা,
-
এবং গবেষণার আপডেট দেখে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাঠকের মন্তব্য