![]()
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার ওপর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দুজন অভিযুক্তকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। নিহতদের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মানুষের কাছে এই দিনটি এখনো আতঙ্কের স্মৃতি হয়ে আছে—যেখানে হঠাৎ গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর ভয়াবহ সহিংসতার মধ্য দিয়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যায় বহু প্রাণ। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর মামলার অগ্রগতি আবারও আলোচনায় এসেছে।
আজ সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং সাবেক মেজর মো. রাফাত-বিন-আলমকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সাব-জেল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
বেষ্টিত নিরাপত্তা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ প্রিজন ভ্যান, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে দুজনকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করানো হয়। পুরো এলাকা ঘিরে ছিল অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য, র্যাব এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এই মামলায় মোট চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাকি দুজন—পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান—এখনো পলাতক রয়েছেন। নিহতদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, “যে দিন আমাদের সন্তানরা প্রাণ হারিয়েছে, সে দিনের বিচার আমরা চাই, দোষী যেই হোক।” পলাতক দুই কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।
সামরিক হেফাজতে থাকা রেদোয়ানুল ইসলাম এবং রাফাত-বিন-আলমকে এর আগে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
জুলাই আন্দোলনের সময় রামপুরায় যে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার নৃশংসতায় বহু পরিবার আজও ভেঙে পড়া জীবন নিয়ে লড়াই করছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান—
“আমরা শুধু বিচার চাই। কত বছর পার হলো, তবুও সেই দিনের রক্তের দাগ মনে থেকে গেছে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে—এই মামলার বিচার ত্বরান্বিত করে ভুক্তভোগীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি পলাতক দুই কর্মকর্তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আজকের কার্যক্রম মামলার অগ্রগতিতে নতুন গতি আনবে—এমন আশা করছে নিহতদের পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের একটাই প্রত্যাশা—ন্যায়বিচার হোক, সত্য উদঘাটিত হোক, যেন আর কোনো পরিবার এমন বেদনার দায়িত্ব বহন করতে না হয়।
পাঠকের মন্তব্য