![]()
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণ বহাল রাখা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার মতো সিদ্ধান্ত কেবল একটি নির্বাচিত সরকারই নিতে পারে। তার দাবি, এসব জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈধতা নির্বাচনহীন একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার বিকল্প উন্মুক্ত না রেখে ২০২৬ সালের সময়সীমা বহাল রাখা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করবে। অথচ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের মতামত বা বাস্তব পরিস্থিতির কার্যকর মূল্যায়ন করা হয়নি।
তারেক রহমান লেখেন, একজন গার্মেন্টস মালিক হঠাৎ শুল্ক সুবিধা হারালে তার কারখানা, শ্রমিকদের কাজ এবং পরিবারের নিরাপত্তা—সবকিছু হুমকিতে পড়ে। আবার রফতানি চাপ বাড়লে একজন শ্রমিকের ওভারটাইম বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে চাকরি হারানোর মতো বাস্তব সংকটও দেখা দেয়। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ বা মতামত থাকে না। এ কারণেই এলডিসি উত্তরণ নিয়ে বিতর্ক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির বাইরে গিয়ে মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইতিহাস বলছে—অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশগুলোর উত্তরণের সময়সূচি সমন্বয় করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশগুলোর জন্য জাতিসংঘের নিয়মেও নমনীয়তার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রয়োজন হলে সময় চাওয়াটা অযৌক্তিক নয়; বরং সেটি একটি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তারেক রহমান প্রশ্ন তোলেন, কেন এমন ভাব তৈরি করা হচ্ছে যে স্থগিতের কোনো বিকল্প নেই? কেন নিজেদের দরকষাকষির ক্ষমতা দুর্বল করা হচ্ছে? সরকার নিজেই আলোচনার আগে বিকল্পগুলো বাতিল করে দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার বক্তব্য, এটি দেশের অর্থনীতির মূল প্রবেশদ্বার, এবং এখানে নেওয়া সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকল্প সীমিত করে দেয়। তাই এ ধরনের প্রতিশ্রুতি কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া উচিত নয়।
তিনি স্পষ্ট করেন, এটি কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ নয়; বরং প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা ও নীতি নির্ধারণের বৈধতা নিশ্চিত করা। জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে এমন সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকারের মাধ্যমে নেওয়া উচিত।
তারেক রহমানের ভাষায়, গ্র্যাজুয়েশনের অধিকার থাকা আর তার জন্য প্রস্তুত থাকা এক নয়। দেশের অর্থনীতির বাস্তবতা, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, রফতানি হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট—সবই বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের অধিকার জনগণের। ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় নির্বাচনই হবে জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ—যেখানে তারা আবারো বলতে পারবে, “সবার আগে বাংলাদেশ।”
পাঠকের মন্তব্য