![]()
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত—চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তি ও পঞ্চম শীর্ষ অর্থনীতির মালিক। তবুও আশ্চর্যের বিষয়, এশিয়ার এই প্রাচীন সভ্যতার দেশটির পাসপোর্টের মান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—কেন কমছে ভারতীয় পাসপোর্টের মূল্য?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ভারতের অবস্থান ১৯৯ দেশের মধ্যে ৮৫তম। অর্থাৎ, রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজানের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলোও এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক ভারতীয় ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সার সম্প্রতি নিজের দেশের পাসপোর্টের দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বলেন, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পর্যটকদের স্বাগত জানালেও পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলো অনাগ্রহ দেখায়।
পাসপোর্ট সূচকে ভারতের পতন
২০২১ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ৯০তম, আর ২০১০–এর দশকে তা ছিল ৮০-এর ঘরে। বিপরীতে, এশিয়ার অন্যান্য অর্থনৈতিক শক্তি—সিঙ্গাপুর, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—প্রতি বছরই উন্নতি করছে। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা ১৯৩টি দেশে, দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা ১৯০টি দেশে এবং জাপানের নাগরিকরা ১৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা পান। ভারতের নাগরিকরা পারেন মাত্র ৫৭টি দেশে—যা মৌরিতানিয়ার সমান।
বিনা ভিসায় ভ্রমণ বাড়লেও অবস্থান নিচে
বিবিসি বলছে, পাসপোর্ট সূচকে ভারতের অবস্থান কমলেও, ভারতীয়দের ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ আসলে কিছুটা বেড়েছে। ২০১৪ সালে ৫২টি দেশ থেকে ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬২টিতে। তবুও র্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়নি, কারণ অন্যান্য দেশের অগ্রগতি ভারতের তুলনায় অনেক দ্রুত।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাসপোর্ট শক্তির মূল নির্ভরতা আন্তর্জাতিক চলাচলের ওপর। যে দেশের নাগরিকরা বেশি ভ্রমণ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সক্রিয় থাকেন, সে দেশের প্রতি ভিসা নীতিও হয় আরও উন্মুক্ত। উদাহরণ হিসেবে চীনের কথা বলা যায়—গত এক দশকে চীনা নাগরিকদের ভিসামুক্ত গন্তব্য ৫০ থেকে বেড়ে ৮২টি হয়েছে, ফলে সূচকে তাদের অবস্থান ৯৪ থেকে উঠে এসেছে ৬০তম স্থানে।
আর্মেনিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ইমেজ এবং নাগরিকদের আচরণও একটি দেশের পাসপোর্ট মান নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। তার মতে, ১৯৮০–এর দশকে পাঞ্জাবে খালিস্তান আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে অবৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির ফলে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক ভারতীয় বিদেশে থেকে যান, যা অভিবাসন নীতিতে প্রভাব ফেলে এবং বহু দেশ ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে।
ফলাফল—আজ ভারতীয় পাসপোর্টের মান আগের তুলনায় কমে গেলেও এর পেছনে কারণ কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অভিবাসন–সম্পর্কিত নানা জটিল প্রভাবও রয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য