![]()
পশ্চিম সুদানের দারফুর অঞ্চলে প্যারামিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) হামলা থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা ভয়াবহ নির্যাতন, ক্ষুধা ও মৃত্যুভয়ের বর্ণনা দিচ্ছেন। দেশজুড়ে এখনো হাজারো মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
এল-ফাশেরের পতন ও সহিংসতা বৃদ্ধি
আল–জাজিরার তথ্যমতে, উত্তর দারফুর অঙ্গরাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের ছিল সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। ১৮ মাসের অবরোধের পর গত রোববার শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। এরপর থেকেই গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তাওইলা শহরে পালিয়ে যাওয়া আলখেইর ইসমাইল জানান, এল-ফাশের থেকে পালানোর সময় তার দলের প্রায় সবাইকে আরএসএফ যোদ্ধারা হত্যা করে। “আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম আমার বন্ধুকে বাঁচাতে, কিন্তু তারা কাউকেই ছাড়েনি,” বলেন তিনি।
তাওইলায় আশ্রয় নেওয়া আরও অনেকেই একই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাহানি হাসান বলেন, “তিনজন আরএসএফ যোদ্ধা আমাদের থামিয়ে মারধর করে, কাপড় খুলে ফেলে, এমনকি নারী হয়েও আমাকে তল্লাশি করে।”
ফাতিমা আব্দুল রহিম জানান, নাতি–নাতনিদের নিয়ে পাঁচ দিন হাঁটার পর তাওইলায় পৌঁছাতে পেরেছেন। “ছেলেদের মারধর করা হয়েছে, সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। পরে জানতে পারি, আমাদের পরের দলে থাকা মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
আরএসএফের দাবি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেতি’ দাগালো দাবি করেছেন, বেসামরিক মানুষদের রক্ষায় তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে। তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এই তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আরএসএফের এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার অভিযোগগুলোকে “মিডিয়ার অতিরঞ্জন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত এল-ফাশের ছেড়ে পালিয়েছে অন্তত ৬২ হাজার মানুষ। এমএসএফ জানিয়েছে, পালাতে চাওয়া অনেককেই হত্যা করা হচ্ছে বা আটকানো হচ্ছে।
বেঁচে ফেরা অনেকে জানিয়েছেন, আরএসএফ বয়স, লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে চিহ্নিত করে মুক্তিপণ দাবি করছে—যার পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড পর্যন্ত (৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার)। কিছু বন্দিকে গাড়ির চাকায় পিষে হত্যা করার ঘটনাও শোনা গেছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর এল-ফাশেরের একটি মাতৃসদন হাসপাতালে আরএসএফ অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে—এবং প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সংঘাতের বিস্তার
দারফুর ছাড়াও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে কর্ডোফান অঞ্চলেও। উত্তর কর্ডোফানের বারা এলাকা থেকে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে, আর জাতিসংঘের আশঙ্কা—রাজ্যের রাজধানী এল-ওবেইদ হতে পারে পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র। জুলাইয়ে কর্ডোফানের বিভিন্ন গ্রামে আরএসএফের হামলায় অন্তত ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন।
জাতিসংঘ বলছে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ নিহত, প্রায় দেড় কোটি বাস্তুচ্যুত, এবং সুদান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে নিমজ্জিত—যেখানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
পাঠকের মন্তব্য