বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়ছে বিনিয়োগের সুযোগ। প্রযুক্তি ও আর্থিক সেবার সহজলভ্যতায় মানুষ আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—কোথায় বিনিয়োগ করলে নিরাপদ থাকবেন, আবার লাভও হবে?
এই দ্বিধা থেকেই অনেকে একদিকে সঞ্চয়পত্রে নিরাপত্তা খোঁজেন, অন্যদিকে কেউ শেয়ারবাজারে লাভের আশায় ঝুঁকি নেন।
মানুষের কষ্টার্জিত টাকার সঠিক ব্যবহার এখন এক ধরনের মানসিক লড়াই—নিরাপত্তা বনাম সম্ভাবনা।
১. নিরাপত্তা বনাম ঝুঁকি: মানসিক শান্তি না বাজারের রোমাঞ্চ?
সঞ্চয়পত্র হলো সরকারের নিয়ন্ত্রিত ও নিশ্চয়তাপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যম। সরকার গ্যারান্টি দেয় বলে মূলধন হারানোর ভয় নেই।
বয়সী নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী কিংবা স্থিতিশীল আয়প্রত্যাশীরা তাই নিশ্চিন্তে সঞ্চয়পত্রে ভরসা রাখেন।
অন্যদিকে, শেয়ারবাজার মানেই অনিশ্চয়তা। বাজারের উত্থান-পতনে একদিনেই কেউ কোটি টাকার মালিক হন, আবার কেউ হারান জীবনের সঞ্চয়।
তবে এই ঝুঁকিই দীর্ঘমেয়াদে বড় মুনাফার সম্ভাবনা তৈরি করে। সফল বিনিয়োগকারীরা বলেন—“ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করাই আসল কৌশল।”
২. মুনাফার হার: স্থির আয়ের নিরাপত্তা বনাম অনিশ্চিত লাভের আকর্ষণ
সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে বার্ষিক গড় মুনাফা ১১-১২ শতাংশ। মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট মুনাফা নিশ্চিত থাকে, মাসিক সুদ তোলার সুবিধাও আছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক সময় এই মুনাফাই হয়ে ওঠে সংসার চালানোর সহায়ক শক্তি।
অন্যদিকে, শেয়ারবাজারে মুনাফা অনিশ্চিত হলেও সীমাহীন। কোনো ভালো কোম্পানির শেয়ার কয়েক বছরের মধ্যে তিন-চার গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
তবে এই লাভ নির্ভর করে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচালনা দক্ষতা, এবং বাজারের মনোভাবের ওপর।
৩. তরলতা: যখন-তখন টাকার প্রয়োজন?
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বড় সুবিধা হলো তরলতা। আপনি চাইলে যে কোনো সময় শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ তুলতে পারেন।
তবে বাজার নিচে থাকলে বিক্রিতে লোকসানের ঝুঁকি থাকে।
অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তির আগে টাকা তুললে জরিমানা বা মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে এটি তেমন কার্যকর নয়।
৪. কর ও নিয়মনীতি: কোথায় বেশি সুবিধা?
সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কাটা হয়, এবং বিনিয়োগ সীমিত। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে সীমাবদ্ধতা নেই—আপনি যত খুশি বিনিয়োগ করতে পারেন।
ডিভিডেন্ডে কর তুলনামূলক কম, আবার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মূলধনি লাভের ওপরও কর-সাশ্রয় রয়েছে।
করপোরেট শৃঙ্খলা মেনে চললে শেয়ারবাজার বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর ও লাভজনক হতে পারে।
৫. বিনিয়োগের লক্ষ্য: স্থিতিশীলতা না প্রবৃদ্ধি?
আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে লক্ষ্য ও মানসিকতার ওপর।
যদি আপনি চান নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত আয়—সঞ্চয়পত্র আপনার পথ।
আর যদি আপনি চান সম্পদ বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বাধীনতা—শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করুন।
ভারসাম্যের বুদ্ধি: “দুই জগতে একসঙ্গে হাঁটা”
অর্থনীতিবিদদের মতে, বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারী কখনো সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখেন না।
একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রে স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত রেখে, শেয়ারবাজারে একটি অংশ বিনিয়োগ করা—এই দ্বৈত কৌশলই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ।
এই ভারসাম্যই আপনাকে দেবে মানসিক শান্তি ও ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা।
পাঠকের মন্তব্য