গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে নেপালে। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের পর এবার সেই একই দৃশ্য নেপালে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জিদের ব্যাপক বিক্ষোভে ভেসে গেছে দেশটি। মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন ও সরকারি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এমনকি সংসদ ভবন এলাকা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রী আত্মগোপনে বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
পশ্চিমবঙ্গে উসকানিমূলক মন্তব্য
নেপালের এই অভ্যুত্থানমুখর পরিস্থিতি ঘিরে এবার পশ্চিমবঙ্গেও গণঅভ্যুত্থানের ডাক শোনা গেছে। ডাক দিয়েছেন বিজেপির সাবেক সাংসদ অর্জুন সিং। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, অর্জুন সিং বলেছেন—
“নেপালের যুবসমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে সাহস দেখিয়েছে, সেটি বড় এক উদাহরণ। বাংলার তরুণদেরও এখন রুখে দাঁড়াতে হবে। এই বাংলায়ও এমন গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন।”
তার এই মন্তব্যকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। সমালোচকদের অভিযোগ, তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
মামলা ও প্রতিক্রিয়া
অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই একাধিক থানায় মামলা হয়েছে। তবে তিনি নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। বরং আরও দৃঢ়ভাবে বলেছেন—“আবারও বলছি, বাংলায় গণঅভ্যুত্থান করে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরানো উচিত।”
মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন—
“প্রতিবেশী দেশে অশান্তির সুযোগে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ ধরতে চাইছে। এই রাজ্যে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা হতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বিজেপির পাল্টা কটাক্ষ
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ করে কটাক্ষ করেন—
“নেপাল থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত অনেক দীর্ঘ। মুখ্যমন্ত্রী যদি একটু সেদিকে নজর দেন, তাহলে ভালো হয়। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জনবিন্যাস দ্রুত বদলে যাচ্ছে।”
মানবিক প্রেক্ষাপট
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে গণঅভ্যুত্থানের যে ঢেউ বইছে, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য বড় সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে। এক দেশের অস্থিরতা অন্য দেশে প্রভাব ফেলতে পারে—অর্জুন সিংয়ের বক্তব্য ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, তা-ই তার প্রমাণ। জনগণের ক্ষোভ ও তরুণদের হতাশা যদি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উসকানি হিসেবে ব্যবহার হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি হবে সাধারণ মানুষের জন্যই।
পাঠকের মন্তব্য