বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় আয়ে প্রায় ২৫% অবদান এবং ৭৮% শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসএমই নির্ভর। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা বিকাশ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার মূল চালিকাশক্তি হলো এই খাত।
এসএমই কী?
SME (Small and Medium Enterprise) বলতে তুলনামূলক ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাকে বোঝায়।
-
ক্ষুদ্র উদ্যোগ: সীমিত কর্মী ও কম পুঁজির ব্যবসা (যেমন: খুচরা দোকান, হস্তশিল্প)।
-
মাঝারি উদ্যোগ: তুলনামূলক বড় কিন্তু কর্পোরেট নয় (যেমন: মাঝারি উৎপাদন কারখানা, সার্ভিস কোম্পানি)।
কেন এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ?
-
জাতীয় আয় ও শিল্পায়নে বড় অবদান
-
শহর ও গ্রামের অর্থনীতির উন্নয়ন
-
নারী উদ্যোক্তা ও নতুন ব্যবসায়ী তৈরিতে সহায়ক
-
কর্মসংস্থান ও রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়ায়
এসএমই খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ
১. পুঁজির অভাব – ব্যাংক ঋণের জটিলতা, জামানতের কড়াকড়ি ও উচ্চ সুদ।
২. ডিজিটাল দক্ষতার ঘাটতি – ই-কমার্স, অনলাইন মার্কেটিংয়ে সীমিত জ্ঞান।
৩. কর জটিলতা – ভ্যাট-ট্যাক্স রিটার্ন প্রক্রিয়া ঝামেলাপূর্ণ।
৪. বাজারে প্রবেশের বাধা – বড় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ কঠিন।
৫. কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি – বৈশ্বিক অস্থিরতায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
৬. অবকাঠামো সীমাবদ্ধতা – পর্যাপ্ত গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও লজিস্টিক নেই।
৭. নারী উদ্যোক্তার প্রতিবন্ধকতা – সামাজিক ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা।
সরকারের করণীয়
-
সহজ শর্তে ঋণ: স্বল্প সুদের ঋণ, জামানত ছাড়া ক্রেডিট গ্যারান্টি।
-
কর সুবিধা: ভ্যাট মওকুফ, ট্যাক্স হলিডে ও সহজীকৃত কর কাঠামো।
-
ডিজিটাল সাপোর্ট: অনলাইন মার্কেটিং প্রশিক্ষণ, গ্রামীণ পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার।
-
অবকাঠামো উন্নয়ন: গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও আধুনিক সাপ্লাই চেইন।
-
নারী উদ্যোক্তা সহায়তা: বিশেষ ঋণ, কর ছাড়, লোন গ্যারান্টি স্কিম।
-
এসএমই ক্লাস্টার গঠন: শিল্পাঞ্চল ও প্রযুক্তি হস্তান্তর উদ্যোগ।
উপসংহার
এসএমই খাত শুধু ব্যবসা নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এই খাতকে শক্তিশালী করা মানে কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা বিকাশ ও জাতীয় অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করা। সরকারের সঠিক নীতি সহায়তা পেলে এসএমই খাত সংকট কাটিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারবে।
পাঠকের মন্তব্য