সোনালী ব্যাংকের বিদেশি সাবসিডিয়ারি সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একটি পরিপত্র অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর এই ধরনের পদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (বিএফআইডি) সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “চাকরি থেকে অবসরে গেলে সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্ব তাৎক্ষণিকভাবে শূন্য বলে গণ্য হবে এবং নতুন নিয়োগ দিতে হবে।”
সোনালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে আসাদুল ইসলামের দায়িত্বে আইনি ব্যত্যয় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে; এখন বিষয়টি দেখবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।”
লাইসেন্স বাতিল ও পুনর্গঠন
২০২২ সালের ১৬ আগস্ট দীর্ঘমেয়াদি লোকসান এবং নানা অনিয়মের কারণে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাবসিডিয়ারির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আগের নাম ছিল সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড। একই দিনে প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠন করে নতুন নাম দেওয়া হয়—সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেড। এটি যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসে ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ও ট্রেড এনটিটি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ৬১.৪৬ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বর্তমান মূল্যে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যক্রম হলো সোনালী ব্যাংক পিএলসি এবং বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের এলসি বিল অ্যাডভাইজ, নেগোশিয়েট, কনফার্ম ও ডিসকাউন্ট সুবিধা প্রদান। এছাড়া যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা।
যুক্তরাজ্যের রেমিট্যান্স বাজারে চ্যালেঞ্জ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও, যুক্তরাজ্যে পরিচালিত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে। ২০১০ সালের পর এক ডজনের বেশি ব্যাংক যুক্তরাজ্যে মানি এক্সচেঞ্জ হাউস খোলার চেষ্টা করলেও প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক এই সাতটি এক্সচেঞ্জ হাউস কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এর অধিকাংশই ধারাবাহিক লোকসান বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “উচ্চ মূলধন থাকা সত্ত্বেও, ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অভাবে সাবসিডিয়ারিগুলো দীর্ঘমেয়াদে টেকসইভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা অত্যন্ত জরুরি।”
পাঠকের মন্তব্য