আগামী ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ, দক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের করতে বাংলাদেশকে ৪ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি সহায়তা প্যাকেজ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার আজ এই তথ্য জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে যাতে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সহায়তা নিশ্চিত করা যায়। আমরা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমকে সমর্থন করতে ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি একটি সহায়তা প্যাকেজ দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, এই সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নাগরিক পর্যবেক্ষণ জোরদারকরণ, অপারেশনাল পরিকল্পনা, বিরোধ নিষ্পত্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
“আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি, যারা নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, অংশ নিয়েছেন। তারা নাগরিক পর্যবেক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাজ করবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে আরও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বলেন রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ইইউ’র পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ। এই বিষয়ে আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখব। আগামী মাসে একটি প্রাক-নির্বাচনী প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে। এ দল পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন নয়, বরং নির্বাচনের পরিবেশ যাচাই করবে। আমরা বাস্তবতা ও সক্ষমতা পর্যালোচনা করছি।”
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করে মিলার বলেন, “আমরা যে কাজ করছি তা হলো- নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে কী কী বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা আলোচনা করা। আমাদের লক্ষ্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন।”
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “ভোটার শিক্ষা, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোকে সক্ষমতা প্রদান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় এবং ভুয়া তথ্য মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো আচরণ ও ফলাফলের দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই তরুণ ভোটারসহ সকলের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।”
ইইউ’র এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন নির্বাচনের বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, “আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে। এটি একটি হিউম্যানিটারিয়ান এবং গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
পাঠকের মন্তব্য