![]()
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই তারিখ নির্ধারণ করেন।
ত্রিপক্ষীয় বিচারপ্যানেলে অন্য দুই সদস্য ছিলেন—বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্র নিযুক্ত বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,
“আসামিরা খালাস পাবেন; বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো অস্বচ্ছতা ছিল না। আমাকে কেউ বাধা দেয়নি।”
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
-
মামলার আসামি তিনজনের মধ্যে দুইজন পলাতক, কারাগারে থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
-
মামলার ২৮ কার্যদিবসে মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
-
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
-
আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে:
-
তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা
-
জব্দ তালিকা ও প্রমাণাদি: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা
-
শহীদদের তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা
-
মামলার প্রসঙ্গে
১️⃣ রাজসাক্ষী আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি:
মামুন নিজ দায় স্বীকার করে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার মতে, আন্দোলন দমন ও হত্যাকাণ্ডে সে সরাসরি জড়িত ছিল।
২️⃣ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ:
-
গণভবনের উসকানিমূলক বক্তব্যের পরে হামলা ও হত্যাকাণ্ড
-
হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা
-
রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা
-
ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় ৬ জনের হত্যা
-
আশুলিয়ায় হত্যাকাণ্ড এবং লাশ পোড়ানো
রায় ঘোষণার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা অবস্থান নিয়েছেন।
হাইকোর্ট নিরাপত্তা বিভাগের ইন্সপেক্টর (অপারেশন) জাহাঙ্গীর জানান,
“নিরাপত্তার স্বার্থে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে যাতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়।”
মানবিক প্রতিফলন
রায়ের প্রতীক্ষায় পরিবার, শিক্ষক, ছাত্র, এবং সাধারণ জনগণ উদ্বিগ্ন।
রংপুরের নিহত ছাত্র আবু সাঈদের পরিবার আশা প্রকাশ করেছেন,
“ন্যায়বিচার আমাদের ক্ষত গভীরতম হলেও কিছু শান্তি দেবে।”
আদালতের বাইরে সামাজিক এবং মানবিক সংস্থাগুলোও সতর্ক রয়েছে। তারা জানাচ্ছেন, রায় কেবল একজন বা দুজনের জন্য নয়—বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রতীকী।
উপসংহার
১৭ নভেম্বরের রায় কেবল তিনজনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না।
এটি হবে বাংলাদেশের বিচার, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিচ্ছবি।
একজন মানবাধিকার কর্মীর ভাষায়,
“ন্যায়বিচারের চেয়ে বড় রাজনীতি আর নেই। ইতিহাসের এই মুহূর্তে সত্য ও মানবতার জয় নিশ্চিত করতে হবে।”
পাঠকের মন্তব্য