![]()
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড বেতন, উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিতকরণসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। কর্মসূচি আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা ঢাকায় এসে এতে যোগ দিয়েছেন।
শিক্ষক আন্দোলনের পটভূমি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও গ্রেড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি থাকলেও দশম গ্রেডে বেতন দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, নার্সরা এইচএসসি ও নার্সিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলেও দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।
অন্যদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি এবং সিএনএড-বিপিএড/বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করে ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, যা তাদের পেশাগত মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অংশগ্রহণকারী ও সংগঠন
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে চারটি প্রধান শিক্ষক সংগঠন—
-
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)
-
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)
-
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি
-
সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক অংশগ্রহণ করবেন। তৃতীয় ধাপে ঢাকার ও চট্টগ্রামের নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরাও কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।
দাবিসমূহ
-
দশম গ্রেডে বেতন প্রদান।
-
চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান।
-
শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ।
বর্তমান বাস্তবতা
দেশে ৬৫,৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত। গত ২৪ এপ্রিল, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম ও ১৩তম গ্রেড থেকে যথাক্রমে ১০ম ও ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার আদেশ দিয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নন।
খায়রুন নাহার লিপি বলেন, “প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত হলেও সাধারণ সহকারী শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও বেতন কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এজন্য আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছি।”
ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
অবস্থান কর্মসূচি এবং দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে শিক্ষকরা আগামী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন—
-
১৫ নভেম্বর: সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা।
-
২৩ ও ২৪ নভেম্বর: অর্ধদিবস কর্মবিরতি।
-
২৫ ও ২৬ নভেম্বর: পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।
-
২৭ নভেম্বর: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান।
-
১১ ডিসেম্বর থেকে: আমরণ অনশন শুরু।
বিশ্লেষণ
শিক্ষকদের এই আন্দোলন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতের মূল্যায়ন, বেতন কাঠামো এবং পদোন্নতির ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা চিহ্নিত করছে। শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়া হলে শুধুমাত্র তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না, বরং শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উপসংহার
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন শুধু বেতন বৃদ্ধি বা গ্রেড পরিবর্তনের দাবি নয়। এটি শিক্ষকদের অধিকার, ন্যায্যতা এবং শিক্ষা খাতের সমতামূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের জন্য একটি গুরুতর আন্দোলন। সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে এই আন্দোলনের ফলাফল ও দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যত।
পাঠকের মন্তব্য