![]()
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের আকাশজুড়ে ৪ নভেম্বরের সন্ধ্যায় যেন নতুন এক সূর্যোদয়।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নেতা জোহরান মামদানি।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে তার বিজয় শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়—এটি এক মানবিক বিপ্লবের সূচনা, যেখানে সততা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক মর্যাদা এক নতুন রূপে জেগে উঠেছে।
একবিংশ শতাব্দীর ‘দুনিয়া কাঁপানো’ ভাষণ
ব্রুকলিনের বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে জোহরান মামদানি যে ২১ মিনিটের ভাষণ দিয়েছেন, তা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সেই বক্তৃতায় তিনি ঘোষণা করেন—
“আজ সেই রাজনীতির মৃত্যু হলো, যে রাজনীতি বেশিরভাগ মানুষকে ত্যাগ করে কেবল নিজেদের মানুষকে গ্রহণ করে।”
তার কণ্ঠে স্পষ্ট প্রতিধ্বনিত হয়েছে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা—“আমরা নতুন যুগের নেতৃত্ব শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা আপনাদের জন্য লড়াই করব, কারণ আমরা আপনাদেরই লোক।”
জনগণের রাজনীতি, ভয়ের নয়—ভরসার
দীর্ঘদিনের হতাশা ও অবিশ্বাসে ক্লান্ত জনতা নতুন করে আশার আলো দেখেছে মামদানির নেতৃত্বে।
তিনি বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে আমি একটি কাজের জন্য ঘুম থেকে উঠব—এই শহরে আপনার আজকের দিনটি যেন গতকালের তুলনায় সুন্দর হয়।”
এ যেন এক মানবিক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সুখ, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
অঙ্গীকারে ভরপুর নতুন যুগ
বিজয়োত্তর ভাষণে মামদানি ঘোষণা দেন—
-
সরকারি বাড়িভাড়া আর বাড়বে না।
-
শহরের বাস বিনামূল্যে চলবে।
-
শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।
-
শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
-
গৃহহীনতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে বিশেষ বিভাগ গঠন করা হবে।
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “এই নতুন যুগে ‘দুঃখিত’ বলে কোনো নেতা পার পাবেন না।”
এই ঘোষণা যেন শাসক-শ্রেণির প্রতি এক অঘোষিত সতর্কবার্তা—“আইন সবার জন্য সমান।”
অভিবাসীদের শহর, অভিবাসীর মেয়র
জোহরান মামদানির একেকটি শব্দ যেন অভিবাসীদের হৃদয়ে সাহস জাগায়। তিনি বললেন—
“নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর। এই শহর অভিবাসীরা গড়ে তুলেছেন। আর এখন এই শহরের নেতৃত্ব দেবে একজন অভিবাসী।”
অভিবাসনবিরোধী ট্রাম্পকে সরাসরি উদ্দেশ করে তিনি উচ্চারণ করেন,
“ডোনাল্ড ট্রাম্প, শব্দ বাড়িয়ে শুনুন—নিউইয়র্কে এখন অভিবাসীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে।”
আশা বেঁচে আছে
তার প্রচারণা দল ছিল স্বপ্নবাজ তরুণদের ভরপুর। এক লাখ স্বেচ্ছাসেবক দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন এই ‘আশার প্রার্থনা’ সফল করতে।
মামদানি বললেন, “আজ আমরা প্রমাণ করেছি—আশা এখনো বেঁচে আছে। অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় যদি আমরা একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি।”
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার রাজনীতি
নিউইয়র্কে ইহুদি ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে জোহরান মামদানি প্রমাণ করেছেন—
রাজনীতি শুধু ক্ষমতা নয়, এটি সহানুভূতি ও একতার শিল্প।
তিনি ঘোষণা দেন, “এখন থেকে কোনো বড় সমস্যা অমীমাংসিত থাকবে না, আর ছোট কোনো সমস্যা অবহেলায় ফেলে রাখা হবে না।”
এক তরুণের নেতৃত্বে মানবিক নগরী
তার ভাষণে শেষবারের মতো প্রতিধ্বনিত হয় এক স্বপ্নময় বাক্য—
“আজ যেসব কথা আমরা সবাই মিলে বলছি, যে স্বপ্ন সবাই মিলে দেখেছি, তার বাস্তবায়ন সবাই মিলেই করব।”
এই একবাক্য যেন নতুন প্রজন্মের রাজনীতির প্রতীক।
এটি শুধু নিউইয়র্ক নয়—বিশ্বজুড়ে আশার নাম হয়ে উঠছে জোহরান মামদানি।
পাঠকের মন্তব্য