![]()
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও নতুন এক মোড়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বাস্তবায়নের সময়সীমা যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে যেন পুরো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন—এটি কেবল একটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক “কৌশলগত মোড়” যা দেশের রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী পথে ঠেলে দিয়েছে।
সংস্কারের সনদ ও সরকারের সময়সীমা
অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে—রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে সংস্কারের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, আট মাসের আলোচনায় যেটি সম্ভব হয়নি, সেটি কি মাত্র সাত দিনে হবে?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলগুলো যদি নিজেদের মধ্যে একমত হতে না পারে, তবে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।
এই ঘোষণার দিনই বিএনপি হঠাৎ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে—যা রাজনৈতিকভাবে এক বিশাল প্রতীকী বার্তা।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা এখন নির্বাচনে ব্যস্ত, অন্য কোনো আলোচনায় আগ্রহ নেই।”
এই অবস্থান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে “নির্বাচনমুখী রাজনীতির সূচনা”, আবার অনেকের কাছে “সংস্কার প্রসঙ্গ থেকে সরে যাওয়ার একটি কৌশল”।
দলগুলোর ভিন্ন অবস্থান: ঐকমত্য নাকি বিভাজন?
সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ এখনো গভীর।
জামায়াতে ইসলামী সরকারের নির্ধারিত সময়সীমাকে ইতিবাচক বললেও, বিএনপি সেটিকে গুরুত্ব দিতে অনিচ্ছুক।
অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ, এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ নয়টি দল নিজেদের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে—তবে সেখানেও ঐকমত্যের দেখা মিলছে না।
কোন বিষয়ে গণভোট হবে, এবং “ভিন্নমত” বা Note of Dissent কি গণভোটে প্রতিফলিত হবে—এই প্রশ্নে দলগুলোর অবস্থান বিভক্ত।
এই বিভাজনকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনার আরেকটি পরীক্ষার মুহূর্ত।”
নির্বাচনের প্রস্তুতি: মাঠে বিএনপি ও জামায়াত
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর রাজনৈতিক মাঠে স্পষ্টতই নড়াচড়া বেড়েছে।
জামায়াত ইসলামী এক বছর আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে, এবং এখন নির্বাচনী তৎপরতা আরও জোরদার করছে।
এছাড়া জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে জন্ম নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে—তারা শিগগিরই সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবে।
রাজনীতির এই নতুন প্রতিযোগিতা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা ও আশঙ্কা—দুই-ই জাগিয়ে তুলেছে।
অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘ অচলাবস্থার পর অন্তত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ফিরে আসছে,
আবার অন্যরা বলছেন—সংস্কার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা থাকলে নির্বাচন হয়তো কেবল “নতুন সংকটের সূচনা” করবে।
আশার আলো নাকি অচলাবস্থা?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও, বিএনপি-জামায়াতসহ বড় দলগুলো একসাথে বসার উদ্যোগ নিচ্ছে না।
জামায়াত ইতিবাচক অবস্থান জানালেও, বিএনপি বলছে—তারা সরকারের “রাজনৈতিক ফাঁদে” পা দেবে না।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ভাষায়—
“সরকার তাদের দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপাচ্ছে। এতে সংকট আরও গভীর হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর মতে,
“রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এখন সংলাপই একমাত্র পথ।”
মানুষের প্রত্যাশা: স্থিতিশীলতা ও আশার ভবিষ্যৎ
রাজনীতির এই অস্থির সময়ে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি আশা করছে স্থিতিশীলতা।
নির্বাচনের প্রস্তুতি, সংস্কারের প্রশ্ন, গণভোটের সম্ভাবনা—সব কিছুর মাঝখানে তারা চায় শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ।
গ্রামীণ ভোটার থেকে শুরু করে শহুরে তরুণ প্রজন্ম—সবার প্রশ্ন এখন একটাই:
“রাজনীতি যদি নির্বাচনের দিকে যায়, তবে সেটি কি জনগণের স্বার্থে, নাকি দলীয় স্বার্থে?”
এই প্রশ্নের উত্তরই হয়তো নির্ধারণ করবে আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ।
পাঠকের মন্তব্য