![]()
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি জোরদারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “এলডিসি উত্তরণের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে; এখন প্রয়োজন দ্রুত, সমন্বিত ও সতর্কভাবে এগিয়ে যাওয়া—যাতে কোনো খাত ক্ষতির মুখে না পড়ে এবং সম্ভাব্য সব সুযোগ সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো যায়।”
মঙ্গলবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এলডিসি উত্তরণ–সংক্রান্ত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
“সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে—এখন কাজ এগিয়ে নিতে হবে”
প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেছেন—
“এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এখন পূর্ণ উদ্যমে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি রাখা যাবে না।”
তিনি আরও জানান,
-
এলডিসি উত্তরণ–পরবর্তী সময়ে কোনো খাত যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে, সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
-
পাশাপাশি উত্তরণ পরবর্তী সুযোগগুলো কীভাবে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়েও এখন থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
এ উদ্দেশ্যে এলডিসি উত্তরণ–সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ডেডিকেটেড মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা
শফিকুল আলম আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস সব সময় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতির কথা তুলে ধরছেন।
তিনি মনে করেন—এলডিসি উত্তরণের পর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আরও গতি আসা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন:
“শ্রমশক্তি, প্রযুক্তি, রপ্তানি সক্ষমতা ও উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন—এসব ক্ষেত্রকে সমন্বয় করে এগোতে পারলে বাংলাদেশ শুধু অঞ্চলেই নয়, বৈশ্বিক বাজারেও নিজস্ব অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরতে পারবে।”
রপ্তানি খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়—দ্রুতগতিতে কাজের নির্দেশ
প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন,
অধ্যাপক ইউনূস বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—পোশাক খাতসহ রপ্তানিনির্ভর কোনো খাত যেন এলডিসি উত্তরণের অভিঘাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে।
তিনি আরও জানান—
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশের শ্রম পরিস্থিতি, কারখানার সেফটি স্ট্যান্ডার্ড এবং নিয়োগ–নীতি উন্নত হবে।
এতে বিদেশি ক্রেতাদের শর্ত পূরণে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং রপ্তানির প্রতিযোগিতা বজায় থাকবে।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ
উল্লেখ্য, আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তীর্ণ হবে।
এই উত্তরণ দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বপ্ন পূরণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুললেও প্রস্তুতি যথাযথ না হলে বিভিন্ন খাতে ঝুঁকি ও চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ কারণেই সরকার এখন থেকেই সমন্বিত প্রস্তুতি ও সতর্কতার ওপর জোর দিচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মন্তব্য