![]()
রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সারা শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই আতঙ্কের সবচেয়ে বেদনাদায়ক চিত্র দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, যেখানে বিভিন্ন হলে অবস্থানরত অন্তত চারজন শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে ভবন থেকে লাফিয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।
ঢাবির চার হলে আতঙ্কজনক লাফিয়ে পড়ার ঘটনা
সকালবেলা হঠাৎ ভবন কেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করেন।
মহসিন হলের চতুর্থ তলা থেকে এক শিক্ষার্থী লাফ দিলে তিনি মারাত্মক আহত হন। একই সময়ে জিয়া হল, কবি জসিমউদ্দিন হল এবং ফজলুল হক হল থেকেও তিনজন শিক্ষার্থীর লাফিয়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের পরিচয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অবস্থা নিয়ে সহপাঠী এবং শিক্ষকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, আতঙ্কের ঢেউ পুরো রাজধানীতে
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭, কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়। মাঝারি মাত্রার হলেও এর প্রভাব ঢাকা ও আশপাশের জেলায় তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
অনেক ভবনে দুলুনি স্পষ্ট দেখা যায় এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভবন হেলে পড়ার ঘটনার খবর আসে, যদিও হতাহতের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ দৌড়ে ঘর থেকে নেমে রাস্তায় আশ্রয় নেন। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই দুলুনিতে ঘরের ঝুলন্ত পাখা, লাইট, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবপত্র দুলতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কেন এমন আতঙ্ক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভবনগুলো পুরোনো হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে বাড়তি ভয় রয়েছে। বিশেষ করে পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ রয়েছে।
ভূমিকম্পের সেই হঠাৎ ধাক্কায় অনেক শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, যার করুণ ফলাফল—হলের ওপরে থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হওয়া।
মানবিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, এ ধরনের ঘটনা শুধু অবকাঠামোগত দুর্বলতার চিত্রই তুলে ধরে না, মানসিক প্রস্তুতির অভাবও ফুটিয়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সচেতনতা এবং মানসিক স্থিতিশীলতার প্রতি আরও নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এখানে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
কলকাতাও কেঁপে ওঠে
শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের আশপাশের এলাকাতেও ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। অনেকে আতঙ্কে ভবন ছাড়তে বাধ্য হন।
মানবিক বার্তা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে জীবন কতটা ভঙ্গুর হয়ে ওঠে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই বেদনাদায়ক ঘটনা তা আবার মনে করিয়ে দিল। আতঙ্কে মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে কতটুকু সময় লাগে, এবং সেই ভুলের পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে—এই দিনের অভিজ্ঞতা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন থেকে লাফ নয়, বরং নিরাপদ স্থানে অবস্থানই ভূমিকম্পে বেঁচে থাকার উপায়। এ ধরনের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও ড্রিল আয়োজন জরুরি।
পাঠকের মন্তব্য