![]()
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হয় শক্তিশালী ভূমিকম্প। হঠাৎ কেঁপে ওঠা মাটি আর থরথর করে ওঠা উঁচু ভবনের দেয়াল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয় তীব্র আতঙ্ক। রাজধানীর বহু এলাকায় ভবন কেঁপে ওঠার পাশাপাশি কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঢাকার ব্যস্ততম পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় একটি বহুতল ভবন স্পষ্টভাবে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পৌঁছে গেছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। ভবনের ভেতরে কেউ আটকা আছেন কি না—তা যাচাই করতে উদ্ধারকর্মীরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভবনের স্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং মানুষের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তারা কাজ করছেন।
উৎপত্তিস্থল ঘোড়াশালের কাছে; মাত্রা ছিল ৫.৫
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৫। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে। মাঝারি মাত্রার হলেও এর প্রভাব রাজধানী ঢাকায় অনেকটাই তীব্র অনুভূত হয়।
আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় মানুষের ঢল
ভূমিকম্পটি স্থায়ী ছিল কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু সেই কয়েক মুহূর্ত যেন মানুষের মনে রেখে যায় গভীর ভয়ের ছাপ।
রাজধানীর লালবাগ, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর, ধানমন্ডি, সিদ্ধেশ্বরী, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। অনেকে ভেবেছিলেন আরও বড় ধাক্কা আসতে পারে। শিশুরা ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে, আর বয়স্করা হাতজোড় করে প্রার্থনায় ডুবে যান।
পার্শ্ববর্তী ভারতেও অনুভূত কম্পন
শুধু বাংলাদেশই নয়, পার্শ্ববর্তী ভারতেও ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও আশপাশের বেশ কিছু এলাকাতেও কম্পন টের পেয়েছেন স্থানীয়রা।
মানবিক দৃষ্টিকোণ—প্রতিটি জীবনের মূল্য রয়েছে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন মুহূর্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
মানুষের জীবন কত ভঙ্গুর, আর সময় কত অনিশ্চিত।
ভূমিকম্পের ভয় কাটেনি এখনো। অনেক মানুষ আঘাত পেয়েছেন, কেউ কেউ ভবনে ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না। পরিবারগুলোর উদ্বেগ, শিশুদের আতঙ্ক, বয়স্কদের অসহায়তা—সব মিলিয়ে পুরো শহরে মানবিক এক বেদনার সুর ছড়িয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভবনগুলো পরিদর্শনের কাজ চলছে। আহত কেউ আছে কি না, নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কি না—তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মানুষের পাশে থাকার আহ্বান
এ ধরনের দুর্যোগে আতঙ্ক ছড়ানো নয়, বরং একে অপরের পাশে দাঁড়ানো—এটাই এখন মূল কাজ।
যে ভবনগুলো হেলে পড়েছে বা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে—সেগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। শান্ত থাকতে, গুজবে কান না দিতে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এমন সংকটের সময় আমাদের মানবিকতা, সংহতি এবং একতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।
পাঠকের মন্তব্য