![]()
বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীরা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত। বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ২ থেকে ৬ শতাংশ। স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০-এর গণআন্দোলন কিংবা ২০২৪ সালের আন্দোলনে নারীদের বড় ভূমিকা থাকলেও আন্দোলন শেষ হলে তাদের উপস্থিতি ও প্রভাব ক্রমেই কমে গেছে। রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও মাঠপর্যায়ের নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা আজও সীমিত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও বিভিন্ন দলের মনোনয়ন তালিকায় নারীর উপস্থিতি অত্যন্ত কম। তাই নারীর রাজনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে নীতি প্রণয়ন ও নির্বাচনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
গতকাল রাজধানীতে উইমেন ইন ডেমোক্রেসি (উইন্ড)–এর আয়োজনে ‘গণতন্ত্র বিনির্মাণে নারী: আমরা কি পেলাম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ একটি ক্ল্যাসিক্যাল পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোতে পুরুষরা নারীদের জায়গা করে দিতে চায় না। দলীয় কাঠামো, নীতি প্রণয়ন, মনোনয়ন—সব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ সীমিত। নারীদের এগিয়ে নিতে হলে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাসলিমা মির্জা মনে করেন, “নারীদের এগিয়ে নিতে পুরুষদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে এবং যারা রাজনীতিতে আসছে, তাদের গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।”
আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম বলেন, “কোনো দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পিছনে ফেলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলো নারীকে সমান সুযোগ দিয়েই এগিয়েছে।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন এগোবে না। সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে রাজনীতি যারা পরিচালনা করে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “নারী–পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র, আধুনিকতা ও ধর্মের মধ্যে সমঝোতা এবং সামাজিক সংলাপ প্রয়োজন। অভ্যুত্থানের পর যতগুলো নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, সেখানে নারীরা উঠে আসছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও হাজার হাজার নারী রাজনীতিতে যুক্ত হবে।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রোখসানা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনীম জারা, বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনি, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, জামায়াতকর্মী মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, সাবেক ছাত্রনেত্রী উমামা ফাতেমা প্রমুখ।
পাঠকের মন্তব্য