![]()
দেশে মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়া আসামির প্রায় অর্ধেকই বিচারিক প্রক্রিয়ায় খালাস পাচ্ছেন। প্রথম আলোর ২০ মাসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকাসহ ২৬টি জেলার ৫০০ মামলার মধ্যে ২৯৬টি মামলায় সব আসামি খালাস পেয়েছেন। অর্থাৎ মাদক মামলায় সাজা হওয়ার হার মাত্র ৪১ শতাংশ।
তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার ঘাটতি
-
ত্রুটিপূর্ণ এজাহার: প্রাথমিক অভিযোগপত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য অসম্পূর্ণ।
-
দুর্বল তদন্ত: মাদক উদ্ধার অভিযান ও আলামতের তালিকা অস্পষ্ট।
-
নিরপেক্ষ সাক্ষীর অভাব: খালাসের সবচেয়ে বড় কারণ। ২৩৭টি মামলায় আসামি খালাস হয়েছে নিরপেক্ষ সাক্ষী না থাকার কারণে।
-
রাসায়নিক পরীক্ষার সমস্যা: ইয়াবার রং বা পরিমাণের অসঙ্গতি, কিছু মামলায় রাসায়নিক প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি।
-
সাক্ষী না দেওয়া: তদন্ত কর্মকর্তা, বাদী বা অভিযানকারী দলের সদস্যরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে অনীহা দেখান।
মাদকের মূল অপরাধীরা ধরা পড়ছে না
মাদক পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়দাতা বা অর্থ জোগানদাতা প্রায়শই তদন্ত ও অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এর ফলে মূল অপরাধীরা বিচারের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
পরিসংখ্যান
-
দেশে ২০২০–২০২৪ সালে মোট মামলা: ৯ লাখ ৫৭ হাজার ১০৭
-
এর মধ্যে মাদক মামলা: ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৯ (৩৮%)
-
মাদক মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি: মৃত্যুদণ্ড
-
২০২৪ সালে জব্দকৃত ইয়াবা: ২ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫১ বোতল
বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ পর্যবেক্ষণ
-
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলম: “মাদক মামলার এজাহার দায়সারা, তদন্তও যেনতেন। ফলে মূল আসামিরা বিচারের আওতায় আসে না।”
-
ক্রিমিনোলজি বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ উমর ফারুক: “দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বল তদন্ত করছে। মূল অপরাধীদের ধরতে না পারলে মাদকের বিস্তার রোধ অসম্ভব।”
-
তদন্ত কর্মকর্তাদের ‘সাকসেস ইন্ডিকেটর’ হয় মূলত জব্দকৃত মাদকের পরিমাণ ও মামলা সংখ্যা, আর তদন্তের মান বা চক্র সনাক্তকরণে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
সমাধানের প্রস্তাব
-
অভিযোগপত্র ও এজাহার যথাযথভাবে প্রস্তুত করা।
-
নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
-
রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে সঠিকভাবে জমা দেওয়া।
-
মূল মাদক চক্র ও পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা।
-
রাষ্ট্রপক্ষ ও তদন্ত কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি এসব ঘাটতি দূর না করা যায়, দেশে মাদকের বিস্তার রোধ করা কখনও সম্ভব হবে না।