![]()
দেশে নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না— এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।
বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর উদ্যোগে আয়োজিত “অর্থনৈতিক সংস্কার ও ব্যবসার চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে এই মন্তব্য করেন তারা।
সেমিনারে ব্যবসায়ীরা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বিনিয়োগ সংকট, শ্রম আইন, এলডিসি উত্তরণ ও বিদেশি বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা নিয়ে সরাসরি মত প্রকাশ করেন।
নির্বাচিত সরকারের দাবি ও সংস্কারের আহ্বান
সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, “অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে হলে আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।”
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন,
“এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসে, তাহলে অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব হবে না।”
একই সুরে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন,
“ক্রেতারা এখন আতঙ্কিত, তারা পণ্য কিনতে চায় না। এই অনিশ্চয়তার একমাত্র সমাধান হলো সুশাসন ও নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বৈধ সরকার।”
শ্রম আইন ও এলডিসি উত্তরণ নিয়ে উদ্বেগ
বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন,
“শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের মতো বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। তিন মাস পরই নির্বাচিত সরকার আসবে— এ সিদ্ধান্ত তাদের নেওয়া উচিত।”
অন্যদিকে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
“বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এলডিসি থেকে উত্তরণের উপযুক্ত নয়। ইতিমধ্যে ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন এই উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সরকারের উচিত জাতিসংঘে আবেদন করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।”
বিনিয়োগহীন অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের সংকট
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন,
“দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। বিমানবন্দর পর্যন্ত নিরাপদ না থাকলে কে বিনিয়োগ করবে?”
ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন,
“খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তির সময় দ্রুত কমাতে হবে। না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
সরকারের প্রতিনিধি ও বিশেষ অতিথিদের মন্তব্য
প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন,
“আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল, এখন তা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এনবিআরের সিঙ্গেল উইন্ডো চালুর ফলে মাত্র দুই মাসে ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে— যা ব্যবসায় প্রশাসনিক ঝামেলা হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সেমিনারে উপস্থিত অন্যদের মধ্যে ছিলেন:
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ (সভাপতিত্বে), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের সিওও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ।
সারসংক্ষেপে
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যকর হবে না। তারা নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থায়ী ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ, বিদেশি বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার যৌক্তিক উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছেন
পাঠকের মন্তব্য