![]()
সরকার যদি ‘ফ্রি অব চার্জ’ (এফওসি) আমদানিতে ৫০ শতাংশ সীমা তুলে দেয়, তাহলে প্রথম বছরেই উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি থেকে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা।
এই ব্যবস্থায় ক্রেতারা কাপড়, আনুষঙ্গিক উপকরণসহ প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল সরবরাহ করেন।
তাদের মতে, এফওসি কোটা বিলুপ্ত করলে দ্বিতীয় বছরে অতিরিক্ত আয় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমদানি নীতি আদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশোধনের পর পোশাক রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে সব কাঁচামাল আনতে পারবেন এবং সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় রপ্তানি করতে পারবেন।
বর্তমানে রপ্তানিকারকরা এফওসি ব্যবস্থার আওতায় মোট প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মাত্র ৫০ শতাংশ আমদানি করতে পারেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এফওসি কোটার সীমা তুলে দিলে প্রথম বছরেই অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হতে পারে।’
তিনি আশা করেন, দ্বিতীয় বছরে এই আয় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, তখন কারখানাগুলো এফওসি ব্যবস্থায় শতভাগ কাঁচামাল পাবে।
কয়েক বছর আগে এফওসি আমদানির সীমা ছিল মোট কাঁচামালের ৩৩ শতাংশ, পরে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়।
এফওসি ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরির জন্য কাপড়, অ্যাকসেসরিজসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সরবরাহ করেন। স্থানীয় প্রস্তুতকারকেরা শুধু কাটিং ও মেকিং চার্জ পান।
শর্ত ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের জটিলতার কারণে স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা বর্তমানে মোট রপ্তানির ৫ শতাংশেরও কম অংশে এফওসি ব্যবহার করেন।
পোশাক রপ্তানিকারকদের মতে, এফওসি প্রক্রিয়া সহজ, ঝুঁকিমুক্ত ও দ্রুত হয়। এফওসি আমদানিতে কোটার সীমাবদ্ধতা না থাকলে দক্ষ শ্রমশক্তি ও উৎপাদন সক্ষমতার কারণে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে আরও বেশি অর্ডার দেবে।
বর্তমানে মোট পোশাক রপ্তানির ৯৫ শতাংশেরও বেশি প্রচলিত এলসি ব্যবস্থায় হয়। আমদানি সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এফওসি ব্যবস্থার ব্যবহার সীমিত।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী জানান, দুই মাস আগে তিনি এফওসি নীতিমালা সহজ করার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ বিলিয়ন ডলারের ম্যান-মেইড ফাইবারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলো সরবরাহ করেছে মাত্র ৪ শতাংশ কাঁচামাল, বাকি অংশ আমদানি করা হয়েছে—মূলত চীন থেকে।
প্রস্তুতকারকেরা জানান, উচ্চমূল্যের ম্যান-মেইড ফাইবার ও পলিয়েস্টার পোশাকের অর্ডার এখন চীন থেকে বাংলাদেশে আসছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
কিন্তু বর্তমান এফওসি নীতিমালার অধীনে ৫০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক বাংলাদেশি কারখানা এর পূর্ণ সুবিধা নিতে পারছে না।
শিহাব উদ্দোজা চৌধুরীর মতে, এফওসি ব্যবস্থায় ঝুঁকি কম। কারণ, ক্রেতারা কাঁচামালের ব্যয় বহন করেন এবং চাইলেই অর্ডার বাতিল করতে পারেন না।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ এফওসি আমদানি চালু হলে দেশে আরও বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে। কারণ, এলসি ব্যবস্থার মতো কাঁচামাল আমদানিতে পোশাক শিল্প মালিকদের আর অগ্রিম ডলার ব্যয় করতে হবে না।
গত রোববার অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী কোম্পানির জন্য এফওসি কোটার সীমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশোধনটি কার্যকর হওয়ার কথা এবং এতে মজুদ ব্যয় কমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, সরকার রপ্তানিমুখী সব খাতকে সমানভাবে সহায়তা করতে চায়, যাতে রপ্তানি আয় ও পরিমাণ দুটোই বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মতো সুবিধার কারণে পোশাক শিল্প এগিয়েছে। ক্রেতারা যদি প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল সরবরাহ করেন, তাহলে অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতও উপকৃত হবে।
গণমাধ্যমকে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে নীতিমালা সহজ করছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘এফওসি কোটার সীমা তুলে দিলে পোশাক খাত অনেক সুবিধা পাবে। কারণ, ক্রেতারা কাঁচামালের মূল্য পরিশোধ করবেন এবং অর্ডার বাতিলের ঝুঁকিও কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে এটি ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।’
তবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের সব অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।’
তার মতে, অতিরিক্ত কাঁচামাল আমদানি দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের ক্ষতি করতে পারে। কারণ, এতে স্থানীয় সুতা, কাপড় ও অ্যাকসেসরিজের চাহিদা কমবে এবং স্থানীয় মূল্য সংযোজনও কমবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘যদি আন্তর্জাতিক ক্রেতারা স্থানীয় অ্যাকসেসরিজ সরবরাহকারীদের বেছে নেন, তাহলে এফওসি কোটার সীমা তুলে দেওয়া লাভজনক হবে। সেটা না হলে এটা তেমন উপকারে নাও আসতে পারে।’