![]()
গত বছর আমার পরিচিত বেশ অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ফান্ডিং পেয়েছেন। বিগত বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এই সংখ্যাটা আসলেই অনেক কম। এর কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন বর্তমান প্রশাসন আমলে ফান্ডিং কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নানান বিধিনিষেধ, ইত্যাদি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেভাবেই নিয়ম মেনে চলছে। বিষয়গুলো সত্য।
তবে তাই বলে কি উচ্চশিক্ষায় কেউ আবেদন করবেন না? বা কেউ কি ফান্ডিং পায়নি?
আমার কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে আলাপে জানতে পারলাম, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫-৬ জন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এখনো পুরো ফান্ডিংয়ে পিএইচডির সুযোগ পাচ্ছেন। আবার বিজ্ঞানে ফান্ডিং স্বল্পতার প্রভাব অনেকটা পড়লেও সামাজিক বিজ্ঞানের এদিকটায় এই প্রভাব কিছুটা কম।
অনেককেই দেখলাম বেশ প্রস্তুতি নিয়েই এবার আবেদন করছেন। এ বিষয়ক হালনাগাদ জানতে পারবেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উচশিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপগুলোয়। তার মানে এখনো বেশ ভালো সংখ্যক শিক্ষার্থীই নানা দেশসহ যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করছেন। তাই আসলে প্রতিযোগিতাটাও বেশি।
ফলে এতসব চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের গবেষণা, অভিজ্ঞতার ওপর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
ফান্ডিং কি আসলেই কমে গেছে?
বর্তমান সময়ে ফান্ডিং যে আগেকার বছরগুলোর তুলনায় কমে গেছে, এটা আসলেই সত্যি। করোনাভাইরাস মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রকৃতপক্ষেই বেশ ভালো ছিল। সেই সময় জিআরই ওয়েভ করে দেওয়ায় সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা আবেদন করা শুরু করল। কিন্তু বিগত দুয়েক বছরে এই সংখ্যাটা কমে এসেছে। কিন্তু তাই বলে কোনো শিক্ষার্থীর যে ফান্ডিং হচ্ছে না, অবশ্যই তা নয়। আপনি যদি খোঁজ নিয়ে দেখেন, জেনে থাকবেন এখন আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। আনুমানিকভাবে আগে যেখানে ৪০ এর মত আবেদন জমা হতো, এখন সেখানে আবেদন পরছে প্রায় দুইশর কাছাকাছি। সত্যি বলতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুলনায় আমাদের গবেষণার মান যথেষ্ট নয়।
উচ্চশিক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনার গবেষণার অভিজ্ঞতা, যদি আপনি ভালো মানের রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডিং পেতে চান। আমার শিক্ষকতা অভিজ্ঞতার প্রায় আট বছরে যখন সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করি, দেখি অনেকেরই নির্দিষ্ট কোনো গবেষণার বিষয় নেই। একইসঙ্গে একজন শিক্ষক সাংবাদিকতা, জেন্ডার, হেলথ কমিউনিকেশন, পলিটিক্যাল কমিউনিকেশন সব বিষয়েই কিছু না কিছু গবেষণা করছেন। এটাই অনেক বড় পার্থক্য বিদেশের একজন অ্যাকাডেমিকের সঙ্গে। আপনি যদি সেখানকার অধ্যক্ষ কিংবা উচ্চশিক্ষারত একজন শিক্ষার্থীর গবেষণা দেখে থাকেন, দেখবেন তাদের গবেষণার বিষয় খুবই নির্দিষ্ট। এবং এটা কয়েক বছর ধরেই তৈরি করতে হয়। আমি দেখেছি আমার যে অধ্যক্ষ শুধু হেলথ কমিউনিকেশন কাজ করেন, উনি সে বিষয়েই বেশ প্রসিদ্ধ। সেখানে তার সমকক্ষ অনেক কম মানুষই আছেন।
তাই আপনি যখন আপনার গবেষণা আগ্রহের কথা জানান, আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার গবেষণা কতটা যথেষ্ট, আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যও। একইসঙ্গে সেই গবেষণা প্রবন্ধটি স্কোপাস ইন্ডেক্সড কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে কি না। তা না হলেও এমন একটি গবেষণা কিংবা প্রস্তাবনা আপনার এসওপিতে উল্লেখ করেন, যার মান আপনার ফান্ডিং পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দ্বিতীয়ত, আপনি শুধু সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আবেদন করবেন যেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে আপনার গবেষণা কাজ মেলে। অনেক সময় রিসার্চ মেথডও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা প্রফেসরের কাজের সঙ্গে মিলতে হয়।