বিশ্বব্যাংকের নতুন পূর্বাভাসে বাংলাদেশের মানুষ আগামী বছরে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন—চিনি, গম, ডাল ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নামতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞ ও আমদানিকারকদের মতে, এই সম্ভাব্য স্বস্তি বাস্তবায়ন নির্ভর করবে ডলারের বিনিময় হার ১২২–১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল থাকা এবং বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় কোনো বড় বিঘ্ন না ঘটার ওপর।
দাম কমছে, কিন্তু এখনো মহামারির আগের চেয়ে বেশি
বিশ্বব্যাংকের “কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
২০২৫ ও ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম গড়ে ৭ শতাংশ করে কমবে।
এটি হবে টানা চতুর্থ বছরের মতো দাম হ্রাসের ধারা।
তবে প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে জানিয়েছে—
দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪–২৩ শতাংশ বেশি থাকবে।
অর্থাৎ, স্বস্তি আসলেও তা পূর্ণভাবে ভোক্তার পকেটে পৌঁছাতে সময় লাগবে।
জ্বালানির দাম কমায় বৈশ্বিক স্বস্তি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা বাড়ায়
ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২০২৬ সালে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে—যা পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
জ্বালানির দাম কমায় বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা হালকা হচ্ছে।
খাদ্যপণ্যের দামও ক্রমান্বয়ে কমছে—
২০২৫ সালে গড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ,
আর ২০২৬ সালে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিনি, গম ও ভোজ্যতেলে ইতিবাচক সংকেত
বাংলাদেশে আমদানিকারকেরা জানাচ্ছেন,
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ৪৫০ ডলার থেকে নেমে ৩৯৮ ডলারে,
এবং গমের দাম ২৮০ ডলার থেকে ২৭০ ডলারে এসেছে।
মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন,
“যদি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকে ও ডলার ১২২–১২৩ টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
তিনি আরও জানান, কিছু পণ্যের দাম ইতোমধ্যে কমেছে, আর ভোজ্যতেল স্থিতিশীল রয়েছে।
ডলারের দরে স্থিতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী মনে করেন,
দেশের বাজারে দাম কমার বিষয়টি শুধু বিশ্ববাজারের ওপর নয়,
ডলারের হার ও ব্যাংক সুদের হার—এই দুই উপাদানের ওপরও নির্ভরশীল।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন,
“বিশ্ববাজারে দাম কমলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।
ভোক্তারা তখন সত্যিকারের উপকৃত হবেন।”
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“যদি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বাস্তবে মিলে এবং ডলার স্থিতিশীল থাকে,
তবে তার প্রতিফলন দেশের বাজারেও দেখা যাবে।”
সারের দাম বাড়ায় কৃষিতে উদ্বেগ
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সারের দাম ২১ শতাংশ বাড়তে পারে,
যদিও ২০২৬ সালে তা ৫ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সারের এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষকের লাভ কমবে এবং ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদনে চাপ তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চপর্যায়ে
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।
যদিও সেপ্টেম্বরে তা কমে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমেছে,
তবুও সাধারণ মানুষ এখনো উচ্চমূল্যের চাপ অনুভব করছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী বছর
বৈশ্বিক দামের পতন, স্থিতিশীল ডলার, ও সুষ্ঠু আমদানি ব্যবস্থাপনা—
এই তিনটি বিষয়ই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের বাজারে প্রকৃত স্বস্তি আসবে কি না।
পাঠকের মন্তব্য