কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) আজ আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে বিপ্লবী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। গ্রাহক পরিষেবা বা কাস্টমার সার্ভিসও এর বাইরে নয়। একসময় কাস্টমার সার্ভিস মানেই ছিল মানুষের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফোন কল, ইমেইল বা অফিস শাখা থেকে সেবা প্রদান। কিন্তু এখন AI-চালিত সেবা দ্রুত, কার্যকরী ও ব্যক্তিগতকৃত সমাধান দিতে সক্ষম। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের Customer Relationship Management (CRM) সিস্টেমে AI যুক্ত হলে গ্রাহকসেবার মান আরও কার্যকর হয়ে ওঠে।
AI মূলত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহককে সহায়তা করে এবং পার্সোনাল ইন্টারঅ্যাকশন বজায় রাখে। AI অ্যাসিস্ট্যান্ট বা চ্যাটবট মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গ্রাহকের প্রশ্ন ও চাহিদা বুঝে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়। একটি জরিপ অনুযায়ী, ৬২ শতাংশ এক্সিকিউটিভ মনে করেন Generative AI কাস্টমার সার্ভিসকে আগের তুলনায় আরও শক্তিশালী ও গঠনমূলক করেছে।
কাস্টমার সাপোর্টে AI-এর অন্যতম বড় দিক হলো সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা। প্রচলিত কাস্টমার কেয়ার সেন্টার সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু AI-চালিত চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থেকে তাৎক্ষণিক উত্তর প্রদান করে, যা গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের ব্রাউজিং ও অর্ডার হিস্ট্রি বিশ্লেষণ করে AI একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে এবং উপযুক্ত প্রোডাক্ট সাজেশন দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে ইতিবাচক কাস্টমার ইন্টারঅ্যাকশন গড়ে ওঠে। বর্তমানে Optimizely, Salesforce Einstein এবং Bloomreach এর মতো টুলস এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
AI কেবল গ্রাহকের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশনই নয়, ডেটা বিশ্লেষণেও ভূমিকা রাখে। পূর্ববর্তী ডেটা বিশ্লেষণ করে AI সাধারণ প্রশ্নের স্বয়ংক্রিয় উত্তর তৈরি করে রাখতে পারে, ফলে গ্রাহকরা দ্রুত সমাধান পান। পাশাপাশি, কোন প্রোডাক্ট বা পরিষেবার চাহিদা বেশি সে বিষয়ে কোম্পানিকে গুরুত্বপূর্ণ ফিডব্যাকও দেয়। এভাবে সেবার মান বৃদ্ধি পায়।
মানব সম্পৃক্ততায় পরিচালিত কাস্টমার সার্ভিস সাধারণত ব্যয়সাপেক্ষ হয়, কিন্তু AI টুল ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ তুলনামূলকভাবে কমে যায়। যেমন, Temple & Webster নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ৮০ শতাংশ কাস্টমার সাপোর্ট AI-এর মাধ্যমে পরিচালনা করছে, যার ফলে তাদের সেবা ব্যয় আয় থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ কমে এসেছে।
তবে AI-চালিত কাস্টমার সার্ভিসের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা পেলে AI ভুল সুপারিশ দিতে পারে। বিদ্যমান CRM সিস্টেমের সাথে AI টুল ইন্টিগ্রেশন করা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। প্রাথমিক সেটআপ খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি। অতিরিক্ত অটোমেশন গ্রাহকের কাছে যান্ত্রিক অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে, আর ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের কারণে ডেটা সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, AI কাস্টমার সার্ভিসকে শুধু দ্রুত নয়, আরও ব্যক্তিগতকৃত ও মানসম্মত করেছে। সার্বক্ষণিক সেবা ও প্রয়োজনীয় সমাধান প্রদান গ্রাহকের আস্থা বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক ফিডব্যাক তৈরি করে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই AI গ্রহণ করবে, তারা ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।
পাঠকের মন্তব্য