লেখক: মিরেক দুশেক,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্লোবাল প্রোগ্রামিং প্রধান,
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগের ঘাটতির কারণে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো এখন নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি—আসিয়ান সদস্য দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এই চ্যালেঞ্জের মুখেও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ান (ASEAN) উদ্ভাবন ও সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই অগ্রগতির পথে হাঁটার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছে।
প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ: ভবিষ্যতের চাবিকাঠি
আসিয়ানের দেশগুলো ইতোমধ্যে ডিজিটাল অবকাঠামো এবং এডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মালয়েশিয়ার নেতৃত্বে আসিয়ান অঞ্চলের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো ডিজিটাল ইকোনমি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (DEFA), যা ২০২৫ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা। এই চুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্যের নিয়মকানুন একীভূত হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আসিয়ান ডিজিটাল অর্থনীতি ২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম যৌথভাবে “Centre for the Fourth Industrial Revolution” (C4IR) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে। এসব কেন্দ্র উদ্ভাবনী নীতিমালা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উচ্চ-মূল্য সংযোজনমুখী খাতে স্থানান্তর
ভিয়েতনাম সম্প্রতি দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে—রেজোলিউশন ৫৭ এবং রেজোলিউশন ৬৮, যেগুলোর লক্ষ্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন উন্নয়ন এবং শক্তিশালী প্রাইভেট সেক্টর গড়ে তোলা।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ড কৃষিক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চাচ্ছে। কেবল চাল রপ্তানিকারক নয়, তারা এখন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে নেতৃত্ব দিতে চায়। এর মাধ্যমে কৃষকরা আরও বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন এবং কৃষি হবে আরও টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল।
সেমিকন্ডাক্টর এবং শিল্পায়নের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে আসিয়ান অঞ্চল সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে মূলত নিম্নস্তরের কার্যক্রমে (assembly, testing, packaging) জড়িত। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চল উচ্চ-মূল্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বিনিয়োগ ও প্রণোদনা নীতি।
সহযোগিতার শক্তি
আঞ্চলিক সহযোগিতাই আসিয়ানের মূল শক্তি। আসিয়ান কমিউনিটি ভিশন ২০৪৫ গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটি একটি “সহনশীল, উদ্ভাবনী, গতিশীল ও জনগণ-কেন্দ্রিক” ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আসিয়ান পাওয়ার গ্রিড (APG) এ অঞ্চলের নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুরের মতো শক্তি-ঘাটতিপূর্ণ দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। একইসঙ্গে, ইন্দোনেশিয়ার নিকেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, কারণ এই খনিজগুলো বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরে অপরিহার্য।
সকল অংশীদারের অংশগ্রহণ জরুরি
সরকারি নেতৃত্ব ছাড়াও বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বিত অংশগ্রহণ ছাড়া এই সহযোগিতার কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। চীনের তিয়ানজিনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত World Economic Forum-এর Annual Meeting of the New Champions 2025 এই ধারাকে আরও গতিশীল করার সুযোগ তৈরি করেছে।
উপসংহার
আসিয়ান অঞ্চলের জন্য এখন একটি চূড়ান্ত মুহূর্ত। প্রযুক্তি, শিল্পায়ন ও সহযোগিতার সঠিক সমন্বয় ঘটাতে পারলে, এই অঞ্চল বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে। ভবিষ্যতের দিকচিহ্ন হলো—উদ্ভাবন ও ঐক্য।
প্রথম প্রকাশ: দ্য জাকার্তা পোস্ট