ইবি ডেস্ক:
বাংলাদেশের শিল্প খাত বর্তমানে গভীর সংকটে। গ্যাস সংকট, ঋণের চাপে দিশেহারা শিল্পোদ্যোক্তারা এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত। রাজধানীর গুলশান ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এক মার্মান্তিক তুলনায় বলেন, “যেভাবে ১৯৭১ সালে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, আজ ২০২৫ সালে একইভাবে আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।” তিনি এই পরিস্থিতিকে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলেও উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় দেশের সাতটি প্রধান শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন: এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিসিআই,আইসিসিবি, বিপিজিএমইএ।
বক্তারা জানান, দেশের গ্যাস সংকট এখন শিল্পখাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কারখানায় গ্যাসের চাপ এতটাই কম যে উৎপাদন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্যাস সংকট ও অর্থনৈতিক প্রভাব
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে। এই গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে দেশের রপ্তানি কমে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নামবে এবং সামষ্টিক অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী ঈদে অনেক কারখানাই বেতন ও ভাতা দিতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত।
শিল্পোদ্যোক্তাদের হতাশা
বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএ-এর আওতাধীন টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প খাত দেশের রপ্তানির প্রায় ৮৫% অবদান রাখে। অথচ এই খাত গ্যাস সরবরাহে কোনো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। অধিকাংশ কারখানায় গ্যাসের চাপ একেবারেই শূন্য বা সামান্য, অথচ মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিল পাঠানো হচ্ছে।
তিন দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প খাতের পক্ষ থেকে সরকারকে উদ্দেশ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানানো হয়:
শিল্পখাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে টেকসই মূল্য নির্ধারণ করা।
গ্যাস সংকট মোকাবিলায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
অন্যান্য নেতাদের উদ্বেগ
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী জানান, গ্যাস সংকটের কারণে অনেক কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
বিটিটিএলএমইএর চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ-ছয়টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিটিএমএ পরিচালক খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, “সরকার কি টেক্সটাইল শিল্প বাঁচাতে চায়, নাকি পাট ও চিনিশিল্পের মতো ধ্বংস করে দিতে চায়?”
বিটিএমএ পরিচালক সালেহউদ জামান জানান, তার কারখানায় প্রতিদিন ৬০ লাখ টাকা বেতন দিতে হয়, অথচ গ্যাস না থাকায় শ্রমিকেরা কাজ না করে ঘরে ফিরে যাচ্ছে।
শিল্প খাতের নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যদি এই সংকটের সমাধান না হয়, তাহলে সামনে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসবে। তারা সরকারের কাছে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।