
ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বে ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গুজরাটের জামনগর ইউনিটের জন্য রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিতে বিরতি দিয়েছে। এই ইউনিট মূলত বিদেশে রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়।
রিলায়েন্সের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আসন্ন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা। ২০২৬ সাল থেকে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে রাশিয়ান তেলজাত পণ্যের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রসনেফট ও লুকঅয়েল-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করেছে, যা রিলায়েন্সের পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রিলায়েন্সের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে যে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে, তা পূর্ণরূপে মানার জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
হোয়াইট হাউস রিলায়েন্সের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস অফিস জানিয়েছে, “আমরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য আলোচনাকে আরও অর্থবহভাবে এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি।”
ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল। ২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মোট তেল আমদানি মাত্র ২.৫ শতাংশ ছিল রাশিয়ান তেল। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাশিয়ান তেলের আমদানির পরিমাণ বেড়ে ৩৫.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। রিলায়েন্স ভারতের রাশিয়ান তেলের প্রধান আমদানিকারক হিসেবে প্রায় ৫০ শতাংশ অংশ নিয়েছে।
জামনগরের পরিশোধনাগারটি বিশ্বের বৃহত্তম একক-সাইট রিফাইনিং কমপ্লেক্স, যেখানে দুটি ইউনিট রয়েছে—একটি রপ্তানির জন্য এবং অন্যটি স্থানীয় বাজারের জন্য তেল উৎপাদন করে।
কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে দিল্লি দীর্ঘদিন ধরে অনড় অবস্থান নিলেও সম্প্রতি ভারতের তেল কোম্পানিগুলো ক্রমশ রাশিয়ান তেলের আমদানির পরিমাণ কমাচ্ছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অক্টোবর রিলায়েন্স নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাশিয়ান তেল কোম্পানিগুলো থেকে অর্ডার ১৩ শতাংশ কমিয়েছে। পাশাপাশি সৌদি আরব থেকে ৮৭ শতাংশ এবং ইরাক থেকে ৩১ শতাংশ আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের রাশিয়ান তেল কমানো আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য