![]()
বাংলাদেশের নদনদী ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বহুদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও উদ্বেগ আবার সামনে উঠে এসেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে। আজ শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা রাবার ড্যাম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন—
“আমাদের দেশের স্বার্থ আমাদেরই দেখতে হবে। জনগণের ভোটে দায়িত্বে এলে ফারাক্কা, তিস্তা—এসব ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
এই বক্তব্য ছিল না কেবল একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি—এটি ছিল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, নদীর ধ্বংস, কৃষকের ক্ষতি ও পানিশূন্যতার যন্ত্রণার এক মানবিক প্রতিধ্বনি।
ফারাক্কা ও তিস্তায় ন্যায্য হিস্যার সংকট—জীবন-মৃত্যুর লড়াই
বিএনপি মহাসচিব বলেন—
“ভারত থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমরা কমিটেড। এটি আমাদের রাজনীতি, আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাস্তবতায় এই বক্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ। মহানন্দা ও পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ার কষ্ট এখানে মানুষের প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের অংশ—
-
নদী শুকিয়ে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে
-
পানির সঙ্কটে নৌপথ বন্ধ হয়ে পড়ছে
-
শত শত পরিবার নদীভাঙন-ঝুঁকিতে
-
শিশু ও নারীরা নিরাপদ পানির অভাবে বিপর্যস্ত
স্থানীয় কৃষকরা বলেন—একটি ন্যায্য পানি চুক্তি শুধু কাগজের বিষয় নয়, এটি তাদের খাবার, জীবিকা ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন।
“দাদাগিরি বন্ধ করা দরকার”—ফখরুলের কড়া মন্তব্য
মির্জা ফখরুল বলেন—
“বেশি গুরুত্ব দিতে চাই এক জিনিসে—আমাদের ওপর দাদাগিরি বন্ধ করা। প্রতিবেশী দেশ চাইলেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন—
“যুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে। সেই বিবেচনায় তাদের আরও বেশি সহযোগিতা করা উচিত ছিল। কিন্তু বরং উল্টোটাই হয়েছে।”
এ বক্তব্য সীমান্ত জনপদের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে গভীরভাবে মিলে যায়। সীমান্ত হত্যার ভয়, পানি সংকট, বাণিজ্য ভারসাম্যের অসমতা—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে অনেকদিন।
“গত সরকার আমাদের চেপে ফেলতে দিয়েছে”—তীব্র অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে
বিএনপি মহাসচিব বলেন—
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত সরকারের সময়ে ভারত সব নিয়ে গেছে, বদলে কিছু দেয়নি। এটি হাসিনা সরকারের ব্যর্থতা।”
তিনি দাবি করেন—বাংলাদেশ তার ন্যায্য পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকার রাজনৈতিক সুবিধা ও সম্পর্ক বজায় রাখার নামে দেশের মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে পানি ও সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়গুলো অবহেলা করেছে।
‘পদ্মা বাঁচাও’—এ শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়, নদী–নির্ভর মানুষের বাঁচার ডাক
পদ্মা শুকিয়ে যাওয়া মানে শুধু নৌপথ সংকট নয়—
▪ নদীভাঙনে ঘরহারা পরিবার
▪ কমে যাওয়া মাছের উৎপাদন
▪ কৃষিতে গভীর ক্ষতি
▪ নারীদের পানি সংগ্রহে অতিরিক্ত ঝুঁকি
▪ স্বাস্থ্যঝুঁকি
▪ স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বসে পড়া
এই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য পানির নীতিকে মানুষের অধিকার ও বেঁচে থাকার প্রশ্ন হিসেবে হাজির করে।
স্বাধীন দেশের পানি–অধিকার ও মর্যাদা—মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী শুকালে মানুষের জীবন শুকিয়ে যায়। পানি শুধু সম্পদ নয়—এটি খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, জীবিকা ও মানবাধিকার—সবকিছুর ভিত্তি।
তাই সীমান্তে হত্যা, পানি চুক্তি, বাণিজ্য বৈষম্য—এসব প্রশ্ন আজ রাজনৈতিক বিতর্ক ছাড়িয়ে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
নদী–জীবন–মানুষ: তাই লড়াইটি মানবিক
আজকের বক্তব্যটি তাই শুধুই একটি রাজনৈতিক সমাবেশের ঘোষণা নয়; এটি এমন একটি বার্তা—
“নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। আর মানুষের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রকে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতেই হবে।”
পাঠকের মন্তব্য