![]()
ঢাকার বাজারে গত কয়েকদিন ধরেই শীতের সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের ব্যয় কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। কিন্তু এই স্বস্তির মাঝেও পেঁয়াজের দাম এখনও উঁচুতেই রয়ে গেছে—যা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এখনো বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
পেঁয়াজে স্বস্তি নেই—নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম কমছে না
বাজারে পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৭০–৮০ টাকার মধ্যে। যদিও নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ কলি বাজারে এসেছে, এর দামও ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে—যা বেশিরভাগ পরিবারের জন্য এখনো নাগালের বাইরে।
বিক্রেতারা বলছেন, এখনো ব্যাপক সরবরাহ শুরু হয়নি। “পাতা পেঁয়াজ এসেছে, মুড়িকাটা এলে দাম কমবে”—এমন আশা দিলেও সাধারণ ক্রেতাদের উদ্বেগ কমছে না।
রোকেয়া বাজারে দেখা পাওয়া এক গৃহিণীর কথায় উঠে আসে সেই বাস্তবতা—
“সবকিছুর দাম বাড়া এই সময়ে পেঁয়াজটা কম হলেও আশা করেছিলাম। কিন্তু সেই জায়গাটাতেও এখন চাপ।”
সবজির বাজারে স্বস্তি—সরবরাহ বাড়ায় দামে কমতি
শীতের সবজির আগমনে বাজার কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
-
ফুলকপি-বাঁধাকপি: ৩০–৫০ টাকা
-
নতুন শিম: ৭০–৮০ টাকা
-
মুলা: ৪০–৬০ টাকা
-
শালগম: ৬০–৮০ টাকা
-
নতুন বেগুন: ৬০–৭০ টাকা
-
কাঁচা টমেটো: ৮০–১০০ টাকা
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ যত বাড়ছে, দাম তত কমছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও সাধারণ মানুষ যে সবজিগুলো কিনতে সংকোচ বোধ করছিলেন, এখন তা অনেকেই ঝুড়িভরে তুলছেন।
গরমের সবজিগুলোর দামও পড়ে এসেছে—পেঁপে ২০–৩০ টাকা, পটল ৪০–৬০ টাকা, করলা ৬০–৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০–৬০ টাকা। লাউ–চালকুমড়া মিলছে ৫০ টাকার মধ্যেই।
ডিম–মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরছে
নিত্যপণ্যের বাড়তি মূল্যের চাপে যেসব পরিবারের জন্য প্রোটিন কেনা বিলাসিতা হয়ে উঠেছিল, ডিমের দাম কমায় সেই পরিবারগুলো কিছুটা সুযোগ পাচ্ছে।
-
ফার্মের ডিম: ১৩০–১৪০ টাকা ডজন (আগে ছিল ১৫০ টাকা)
-
ব্রয়লার মুরগি: ১৭০–১৮০ টাকা কেজি
-
সোনালি মুরগি: ২৮০–৩০০ টাকা কেজি
একজন ক্রেতার ভাষায়—
“সবকিছু তো আর পারি না কিনতে। ডিমের দাম কমেছে, এটা বড় স্বস্তি। অন্তত বাচ্চাদের জন্য কিছুটা প্রোটিন জোগাতে পারছি।”
শুধু সাধারণ পরিবারই নয়, ছোট ব্যবসায়ী, চায়ের দোকান, হোটেল–রেস্তোরাঁর মালিকরাও ডিমের দাম কমায় স্বস্তি পেয়েছেন।
এখনো কেনা কঠিন—নিম্নআয়ের মানুষের দিনযাপন ভারীই রয়ে গেছে
সবজি ও ডিমের বাজারে খানিকটা স্বস্তি ফিরলেও সামগ্রিকভাবে নিম্ন–মধ্যবিত্ত মানুষের চাপ কমেনি। বাজারে যাওয়া মানুষের অভিব্যক্তিতে তা স্পষ্ট।
সবজি কিনতে আসা এক রিকশাচালক বললেন—
“দাম একটু কমেছে ঠিকই, কিন্তু বেতন তো বাড়ে না। চাল, ডাল, তেল—সবই আগের মতোই বেশি। যা বাঁচাতে পারছি, সবজির দামে সেই সুযোগটাই।”
অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম না কমায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন—
“একটা সময় পেঁয়াজ ছিল ৩০–৪০ টাকা। এখন ১২০! রান্নার খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়।”
আগামী দিনের আশা—সরবরাহ বাড়লে স্বস্তি আরও বাড়বে
বিক্রেতা ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন—
-
শীতের সবজির সরবরাহ আরও বাড়লে দাম আরও কমবে
-
নতুন পেঁয়াজ সম্পূর্ণভাবে বাজারে আসলে দাম কমার সম্ভাবনা
-
পরিবহন ব্যয় কমলে রুই-কাতলা–অন্যান্য মাছের দামও কমতে পারে
সাধারণ মানুষের আশা—এই স্বস্তির পরিধি যেন আরও বাড়ে, আর বাজার যেন স্থিতিশীল থাকে।
পাঠকের মন্তব্য