![]()
বাংলাদেশ এখন এক জটিল রাজনৈতিক সংকটে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে রাজনৈতিক জটের মধ্যেই আটকে গেছে দেশের ভবিষ্যৎ।
গত ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে। কিন্তু সেই আলোচনাই হয়নি— এমনকি দলগুলো এক টেবিলে বসতেও রাজি হয়নি। সরকারের নির্ধারিত সময়সীমা ১০ নভেম্বর শেষ হয়েছে।
এখন সরকার এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তে
গত বছরের ৮ আগস্টের সফল অভ্যুত্থানের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৬ মাসে তিনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও সরকারকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
তবু দেশের মানুষ এখনো আশাবাদী— কারণ, একজনই আছেন যিনি সংকটের গিঁট খুলতে পারেন, তিনি ড. ইউনূস।
আগস্টে জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তিতে তিনি ঘোষণা দেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপ।
নির্বাচনই একমাত্র পথ, তবু বাধা তৈরি করছে একটি মহল
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ।
ব্যবসা-বাণিজ্য অচল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ জনজীবন, আইএমএফের অর্থ ছাড় স্থগিত, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গুর— সর্বত্র হতাশা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তবে দেশে ও বিদেশে কিছু মহল চায় না সেই নির্বাচন হোক। তারা গণভোটসহ নানা ইস্যু তুলে পরিস্থিতি জটিল করছে। পরিকল্পিতভাবে সমাজে বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে— যা “জুলাই বিপ্লবের” চেতনার পরিপন্থী।
গণভোট ও নির্বাচন— প্রধান দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু
জুলাই সনদে প্রস্তাবিত সংসদের উচ্চকক্ষ ও গণভোট নিয়ে বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান এক নয়।
-
জামায়াত চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হোক।
-
বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে।
-
সরকারও একই দিনে উভয় আয়োজনের পক্ষে, যাতে রাজনৈতিক আপস সম্ভব হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।
এনসিপি— তৃতীয় শক্তির সম্ভাব্য ভারসাম্য
বিএনপি-জামায়াতের বাইরে সরকার এখন নজর দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র দিকে। দলটি এখনো জুলাই সনদে সই করেনি, তবে সরকার মনে করছে তারা অনেকটাই নমনীয় অবস্থানে আছে।
এনসিপি দাবি করছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে জারি করতে হবে। সরকার বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে অসম্ভব বললেও, দলটি নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে আপত্তি তুলবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের অভিমত: সংকট সমাধানে ইউনূসই শেষ আশ্রয়
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের ব্যক্তিত্ব, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তার নেতৃত্বে নির্বাচনই হতে পারে মুক্তির পথ।
দেশের মানুষ এখন সেই নির্বাচনের অপেক্ষায়।
গণতন্ত্র, স্থিতি ও উন্নয়নের একমাত্র দিকনির্দেশনা— একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার।
প্রশ্ন এখন একটাই:
প্রধান উপদেষ্টা কি পারবেন?
জাতি বলছে — তাঁকে পারতেই হবে।
পাঠকের মন্তব্য