![]()
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় আরও বাড়বে, মূলত সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকি প্রদানের চাপ বৃদ্ধির কারণে। এর সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন, বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন ঘিরেও ব্যয় বাড়বে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে।
প্রথম প্রান্তিকেই ব্যয় ৫৫ শতাংশ ছাড়াল
অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এর মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধেই লেগেছে প্রায় ৩১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এই তিন মাসে সরকারের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।
নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা
সরকার সমস্যা–জর্জরিত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ব্যাংকের পুঁজির জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায়, যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা এই মাসেই স্থানান্তর করা হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই পদক্ষেপ আমানতকারীদের সুরক্ষা ও আস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য নেওয়া হচ্ছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান এ বিষয়ে বলেন,
“নতুন ব্যাংক গঠন ইতিবাচক হতে পারে, যদি এর সঙ্গে বাস্তবসম্মত সংস্কার কার্যক্রম চালু থাকে। সংস্কার ছাড়া আগের মতোই সরকারি অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি থাকবে।”
বর্ধিত প্রতিশ্রুতিতে বাড়ছে চাপ
সরকার বাজেট ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা বাড়িয়েছে।
-
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।
-
বেতন কমিশনের প্রতিবেদন ডিসেম্বরের মধ্যে জমা হওয়ার কথা। এর সুপারিশ আংশিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ব্যয় আরও বাড়বে।
-
জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের জন্য অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে এটি বাড়ানো হতে পারে।
রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ১১৭ কোটি টাকা—গত বছর এই প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের ব্যয়ের বেশির ভাগ গেছে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভর্তুকি এবং প্রণোদনায়।
কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়গুলোর সম্মিলিত ব্যয় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।
কঠোর নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ
অর্থ বিভাগ ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে।
-
অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
-
নতুন ভবন নির্মাণ (বাসস্থান বা অফিস) কেবল সেই প্রকল্পেই অনুমোদন পাবে, যেখানে কাজের আদেশ আগে থেকেই জারি হয়েছে।
-
যানবাহন কেনা, বিদেশ সফর ও অন্যান্য ঐচ্ছিক ব্যয়েও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি
ড. সেলিম রায়হান বলেন,
“এই সংশোধিত বাজেট পরবর্তী সরকারের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। তাই এখনই রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি, যাতে নতুন সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।”
তিনি আরও বলেন,
“যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক সংস্কারেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য। এই আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও শুরু হওয়া উচিত।”
পাঠকের মন্তব্য