
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত গুম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা তিনটি পৃথক মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মঙ্গলবার (আজ) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ত্রিশ আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে দুইটি গুম ও নির্যাতন সংক্রান্ত — একটি টিএফআই সেলে এবং অপরটি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতনের অভিযোগে। তৃতীয়টি হলো ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টে রাজধানীর রামপুরায় সংঘটিত ২৮ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা।
আজকের শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন।
এর আগে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে সাধারণ পোশাকে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনাল চত্বরে ছিলো কড়া নিরাপত্তা।
ট্রাইব্যুনাল এই তিন মামলার পলাতক আসামীদের হাজির করতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। গুম সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২০ নভেম্বর এবং রামপুরা হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে ৫ নভেম্বর।
এদিকে, অভিযুক্তদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৫ জন কর্মরত কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের বিষয়ে গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী জানায়, মোট ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। ১৫ জন বর্তমানে কর্মরত, ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত এবং একজন এলপিআরে রয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন জানান, গ্রেফতার দেখানো ১৫ কর্মকর্তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সাবজেলে রাখা হবে।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন,
“এই মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তা বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সহায়ক।”
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গুম ও নির্যাতনের দুই মামলায় এবং রামপুরায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ২২ অক্টোবর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
এই মামলাগুলো দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য