জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, শুক্রবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তুত করা ‘জুলাই সনদ’ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ হাতে স্বাক্ষর করেছেন এবং উপস্থিত ছিলেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। তবে তাঁর ভাষায়, “এটার মাধ্যমে জুলাই সনদ তৈরি হলো বটে, কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল—এটি কি সত্যিই জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন?”
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক ভিডিওতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
মাসুদ কামাল বলেন, “দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। কিন্তু এই সনদে স্বাক্ষর করেছে মাত্র ২৫টি দল—অর্ধেকেরও কম। তাহলে কীভাবে এটাকে জাতীয় ঐকমত্য বলা যায়?”
তিনি আরও বলেন, “যারা জুলাই সনদ প্রণয়নের মূল উদ্যোগে ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তারাই উপস্থিত ছিল না। তারা আগেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না, কারণ তাদের প্রস্তাব বা মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।”
মাসুদ কামালের মতে, এনসিপিকে বোঝানোর জন্য সরকারি পক্ষ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিরা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। “আলোচনার প্রথম পর্যায়ে ৩৩টি দল ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০টি দল অংশ নেয়। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই এই সনদের খসড়া তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যারা নিয়মিত আলোচনা করেছে, তারাই এখন বলছে—‘আমরা যা বলেছি, তা পাইনি। আমাদের ঐকমত্যের জায়গাগুলো দলিলে প্রতিফলিত হয়নি।’”
তিনি বলেন, “কিছু বাম রাজনৈতিক সংগঠন খসড়ার চূড়ান্ত সংস্করণ দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেটিও দেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় অনেকেই কেবল গিয়ে স্বাক্ষর করে এসেছে, তারা আসলে কী স্বাক্ষর করেছে তা নিজেরাও জানে না।”
মাসুদ কামাল আরও বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য মানে হওয়া উচিত দেশের সকল রাজনৈতিক পক্ষ, নাগরিক সমাজ, ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত মতামতের প্রতিফলন। কিন্তু অর্ধেকেরও কম রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে যে দলিল তৈরি হলো, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখায় যে জুলাই সনদ নিয়ে এখনো দেশে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য গঠিত হয়নি। বরং এটি আরও বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য