রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) সঙ্গে সালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা সালিশ ও মামলা—দুই প্রক্রিয়াতেই এগোচ্ছি। আরসিবিসিও সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরে তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও মামলাটি চলমান, এবং আমাদের আইনজীবীর মতে রায় বাংলাদেশের পক্ষেই আসবে। সালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসির কাছে মূল অর্থের পাশাপাশি সুদ ও আইনি খরচসহ একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দাবি করেছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির চেষ্টা হয়েছিল, যা ছিল একটি সাইবার হামলা। হ্যাকাররা সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ম্যানিলার আরসিবিসির চারটি অ্যাকাউন্টে এবং বাকি ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে পাঠানোর চেষ্টা হয়। বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কায় অর্থ স্থানান্তর ব্যর্থ হয়, ফলে ওই অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়।
পরবর্তীতে ফিলিপাইন সরকার আরসিবিসিকে জরিমানা করে, যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পায়। এখনো প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়া বাকি।
২০২০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে। যদিও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি অভিযোগ খারিজ হয়, জুনে নিউইয়র্ক কোর্ট অব আপিলস মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরের আরসিবিসির আবেদন নাকচ করে।
সম্প্রতি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত রিজার্ভ চুরির মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের আদেশ দেন। আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ফিলিপাইনভিত্তিক আরসিবিসিকে লক্ষ্য করে, যারা চুরি হওয়া অর্থ পাচারে জড়িত ছিল।
সিআইডি প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ জানান, আদালতের আদেশের কপি ইতোমধ্যে ফিলিপাইনের আরসিবিসি কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আরসিবিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো টান, জুপিটার শাখার ম্যানেজার মায়া সান্তোস দেগুইতোসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্তা উপেক্ষা করে তারা বেআইনিভাবে চুরি হওয়া অর্থ বিতরণ করেন। ফিলিপাইনের আদালত ইতোমধ্যেই এই কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান বলেন, “ঢাকার আদালত অর্থ বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
পাঠকের মন্তব্য