বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতীক শুধু ভোটের চিহ্ন নয়—এটি দলের পরিচিতি, কর্মীদের আবেগ ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সেই প্রতীক নিয়ে এবার পড়ল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক নেই। ফলে এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতীক তালিকার হালচাল
ইসি সচিব জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে ১১৫টি প্রতীকের তালিকা অনুমোদন হয়েছে। তবে সেখানে নেই শাপলা। নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই নির্ধারিত তালিকার ভেতর থেকেই প্রতীক বেছে নিতে হয়।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন—“শাপলা প্রতীক না থাকায় এনসিপিকে বিকল্প প্রস্তাব পাঠাতে হবে। নিষ্পত্তি হবে ইসি ও দলের সম্মতিতে।”
এনসিপির দাবি
অন্যদিকে এনসিপি শুরু থেকেই শাপলা, সাদা শাপলা কিংবা লাল শাপলা প্রতীক দাবি করে আসছে। দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,
“আমাদের প্রতীক শাপলাই হতে হবে। আমরা যে তিনটি প্রতীকের কথা বলেছি তা থেকে সরছি না। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তবে আমরা আবার জনগণের সামনে আসব।”
রাজনৈতিক প্রতীকের তাৎপর্য
বাংলাদেশের গ্রামীণ ভোটারদের কাছে প্রতীক একটি দৃশ্যমান চিহ্ন। যারা শিক্ষিত নন বা অক্ষরজ্ঞান সীমিত, তাদের কাছে প্রতীকের মাধ্যমেই দল ও প্রার্থীর পরিচয় পৌঁছে যায়। তাই প্রতীক নিয়ে অনড় থাকা শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগানোরও বিষয়।
নির্বাচন কমিশনের করণীয়
ইসি সচিব জানান, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন–সংক্রান্ত নথিপত্র এখনো পর্যালোচনায় আছে। তবে প্রতীক সংক্রান্ত কাজ ইতোমধ্যেই এক ধাপ এগিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুশীল সমাজ, শিক্ষক, নারী নেত্রী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। পূজা ও ছুটির দিন মাথায় রেখে ধাপে ধাপে আলোচনার সময়সূচি ঠিক করা হবে।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতীক বিতর্ক নতুন নয়, তবে প্রতিবারই এর প্রভাব পড়ে ভোটার ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। একটি প্রতীকের অনিশ্চয়তা কেবল দলের ভেতর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না—এটি ভোটারদের কাছেও বিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি করে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতীক শুধু নির্বাচন–কেন্দ্রিক বিষয় নয়, এটি জনগণের সাথে দলের সম্পর্কের প্রতীকী প্রতিফলন। তাই এনসিপি–ইসি সমঝোতা শুধু প্রশাসনিক সমাধান নয়, এটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করবে।
পাঠকের মন্তব্য