প্রতিবেদক, এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যার শিরোনাম ছিল “Removing Barriers to American Leadership in Artificial Intelligence”। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক নেতৃত্বে নিয়ে আসা, যার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক শক্তি ও মানব উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
এর ধারাবাহিকতায়, ২৩ জুলাই হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত হয়েছে “Winning the AI Race: America’s AI Action Plan”—একটি বিস্তৃত কৌশলপত্র যা যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক এআই প্রতিযোগিতায় শীর্ষে রাখতে ডিজাইন করা হয়েছে। AI Action Plan-এর মূল তিনটি স্তম্ভ এই কৌশলপত্রে ৯০টির বেশি নীতিগত পদক্ষেপ উল্লেখ করা হয়েছে যা নিচের তিনটি প্রধান স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি: ১. উদ্ভাবনের গতি বাড়ানো ২. শক্তিশালী AI অবকাঠামো নির্মাণ ৩. বৈশ্বিক AI কূটনীতি ও নিরাপত্তায় নেতৃত্ব প্রদান মাইকেল ক্র্যাটসিওস, হোয়াইট হাউজের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির পরিচালক বলেন, “এই পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক এআই নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়।”
AI পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ • AI প্রযুক্তি রপ্তানি: বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরগুলো মিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত মিত্রদের কাছে পূর্ণাঙ্গ AI সমাধান রপ্তানিতে কাজ করবে। • ডেটা সেন্টার নির্মাণের গতি বৃদ্ধি: চিপ ফ্যাক্টরি ও ডেটা সেন্টার স্থাপনে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। • নিয়ন্ত্রনমূলক সংস্কার: অপ্রয়োজনীয় ফেডারেল বিধিনিষেধ সরিয়ে AI খাতে উদ্ভাবন সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। • মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা: সরকারি AI চুক্তিতে এমন ভাষার মডেল নিশ্চিত করা হবে যা রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত এবং খোলামেলা মতপ্রকাশে সহায়ক।
ডেটা সেন্টার নির্মাণে পরিবেশ ছাড়: উদ্বেগ বাড়ছে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে National Environmental Policy Act-এর আওতাধীন পরিবেশগত ছাড় ত্বরান্বিত করা হচ্ছে, যার মধ্যে Clean Air Act ও Clean Water Act-এর বিধান শিথিল করা হচ্ছে। তবে শর্ত হলো, প্রতিটি ডেটা সেন্টার নির্মাণে কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া, সরকারি জমি বরাদ্দ দিয়ে ডেটা সেন্টার ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এনর্জি সেক্রেটারি ক্রিস রাইট এই উদ্যোগকে ‘নতুন ম্যানহাটন প্রজেক্টের’ সাথে তুলনা করেছেন। বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা International Energy Agency (IEA) সতর্ক করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এআই-চালিত ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুৎ চাহিদা জাপানের বর্তমান জাতীয় চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। • ২০২৪ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত, ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রতিবছর ১৫% হারে বাড়বে, যা অন্যান্য খাতের চেয়ে ৪ গুণ দ্রুত।
যুক্তরাষ্ট্রে AI অবকাঠামোর শক্তি চাহিদা ও কার্বন নিঃসরণ ২০৩৩ সালের মধ্যে এআই ডেটা সেন্টারগুলো দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ২০% পর্যন্ত বাড়াতে পারে। এর অধিকাংশ বিদ্যুৎ আসবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে, যার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বাড়বে। • এই বৃদ্ধির ফলে greenhouse gas emissions এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাৎসরিক নির্গমনের ৪০% সমান। • পানির ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে—এআই সিস্টেম কুলিংয়ের জন্য প্রচুর পানি লাগে, যা খরাপ্রবণ অঞ্চলে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিক্রিয়া Nvidia-এর CEO জেনসেন হুয়াং বলেন, “আমেরিকার একমাত্র ও অন্যতম শক্তি হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।” এরই মধ্যে OpenAI ও Oracle একত্রে “Project Stargate”-এর ঘোষণা দিয়েছে, যার মাধ্যমে $৫০০ বিলিয়ন বিনিয়োগে ৪.৫ গিগাওয়াট নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে, Amazon, Meta, Google এবং Microsoft—সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকছে। • Amazon চুক্তি করেছে Talen Energy-র সাথে ১,৯২০ মেগাওয়াট নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। • Meta অংশীদার হয়েছে Constellation-এর সাথে। • Google নিচ্ছে সুপারপলিউট্যান্ট কার্বন ক্রেডিট এবং পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক শক্তির সহায়তা। • Microsoft ঘোষণা করেছে $৮০ বিলিয়ন বিনিয়োগ। “AI হল নতুন অস্ত্রভাণ্ডার”—ট্রাম্প প্রশাসনের বার্তা স্পষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “AI প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করা অপরিহার্য। আমেরিকাকে এআই প্রযুক্তির স্বর্ণমানদণ্ড ধরে রাখতে হবে—এটাই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ভিত্তি।” উপসংহার: যুক্তরাষ্ট্রের AI কর্মপরিকল্পনা একদিকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রযুক্তিগত আধিপত্যের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে পরিবেশগত ও শক্তি ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার—AI দৌড়ে জয়ী হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সূত্রসমূহ:
· The White House
· IEA
· Food and Water Watch
· CarbonCredits.com
· OpenAI & Oracle Press Releases
· EntrepreneurBD.com সংকলন
পাঠকের মন্তব্য