হঠাৎ বন্ধ ফ্লাইট এক্সপার্ট: লাখো টাকার ক্ষতিতে গ্রাহক ও এজেন্সিগুলোর হতাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩ আগস্ট ২০২৫
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ হঠাৎ সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শত শত গ্রাহক ও অংশীদার এজেন্সি। ২ আগস্ট (শনিবার) সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কেউ তাঁদের প্রিপেইড টিকিটের নিশ্চয়তা খুঁজছেন, কেউবা অর্থ হারিয়ে চরম হতাশায়।
সংকটের পেছনে কী?
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি কোনো এয়ারলাইন্স থেকে নয়, বরং দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বুকিং করত। অভিযোগ উঠেছে—এই মধ্যস্থতাকারীরা এখন রিফান্ডের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম এক অভ্যন্তরীণ বার্তায় দাবি করেছেন, তাঁর দুই সহযোগী পরিকল্পিতভাবে টাকা তুলে নিয়ে তাঁর ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
অন্যদিকে, হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষই অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে চলে গেছেন। এ বিষয়ে তিনি মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এ সংকট কীভাবে এড়ানো যেত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নীতিগত ও কাঠামোগত ব্যবস্থা থাকলে এমন বিপর্যয় এড়ানো যেত:
-
সরাসরি এয়ারলাইন্স চুক্তি: মধ্যস্থতাকারীর ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হতো।
-
পেমেন্ট এসক্রো ব্যবস্থা: গ্রাহকের অর্থ তৃতীয় পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকত।
-
নিয়মিত অডিট: স্বচ্ছতা থাকলে আগেই অনিয়ম ধরা যেত।
গ্রাহক ও এজেন্সিদের করণীয়:
-
সব প্রমাণ সংরক্ষণ করুন – টিকিট, রসিদ, মেসেজ, ইমেইল।
-
আইনগত ব্যবস্থা নিন – ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ।
-
সমবেত পদক্ষেপ নিন – ক্ষতিগ্রস্তরা যৌথ কমিটি গঠন করে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
ভবিষ্যতের জন্য করণীয়: ট্রাভেলটেক খাতে রিফর্ম প্রয়োজন
এই ঘটনা গোটা ট্রাভেল টেক ইন্ডাস্ট্রির স্বচ্ছতা ও আস্থার সংকট প্রকাশ করেছে। নীতিনির্ধারকদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে:
-
OTA লাইসেন্স ও রেগুলেশন চালু করা
-
Travel Protection Fund গঠন বাধ্যতামূলক করা
-
ডিজিটাল ট্রাভেল প্ল্যাটফর্মের নিয়মিত অডিট নিশ্চিত করা
উপসংহার:
এই সংকট শুধু ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ নয়, বরং দেশের ডিজিটাল ট্রাভেল ইকোসিস্টেমে ভবিষ্যত আস্থা, নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। সময় এসেছে ট্রাভেলটেক খাতকে নিয়ন্ত্রণে এনে গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও আইনগত প্রটোকল নিশ্চিত করার।
পাঠকের মন্তব্য