২০২৪ সালের ৪ আগস্ট—পিরোজপুরবাসীর জন্য ছিল ঐতিহাসিক এক দিন। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের দমন-পীড়ন ও সরকারি দলীয় বাধার মুখে যে ছাত্রজনতা রাস্তায় নামতে পারেনি, সেই ছাত্ররাই সেদিন ঝড় তুলেছিল রাজপথে।
এর আগেও ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেখা গেলেও পিরোজপুর ছিল তুলনামূলক শান্ত। তবে ৩ আগস্ট রাতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়—জীবনের ঝুঁকি থাকলেও পরদিন আন্দোলন হবে। রাতভর হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে সাংগঠনিক বার্তা।
নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেও শেষরাতে একমত হন—মাঠে নামতেই হবে। রাতেই পুলিশ অভিযান চালায়, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শহরে আতঙ্ক ছড়ায় মোটরসাইকেল মিছিল করে।
ভোরে ছাত্ররা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ঘিরে অবস্থান নেয়। মেয়েরা আগে জড়ো হয়, পরে ধীরে ধীরে সবাই সেখানে সমবেত হয়। হেলমেটধারী ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রথম দফায় মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়, তবে আন্দোলন থেমে যায় না।
ছাত্ররা কৌশল বদলে সিও অফিস মোড় ঘিরে নতুনভাবে মিছিল করে। এ সময় পুলিশ লাইন সড়ক দিক থেকে আরও কয়েকশ শিক্ষার্থী মিছিলে যোগ দেয়। মিছিল এগিয়ে যায় শহরের দিকে।
দুপুরে মহিলা কলেজ মোড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ—ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে হামলা চালায়। কিন্তু ছাত্রজনতা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পিছিয়ে যায়, রেখে যায় ৫০-৬০টি মোটরসাইকেল।
মহানগরবাসীও তখন রাস্তায় নেমে আসে—মা, বোন, অভিভাবকরা হাতে যা পেয়েছে, তা নিয়েই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায়। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হয় জোহরের নামাজ, রাস্তাতেই খাওয়া হয় দুপুরের খাবার। রাজনৈতিক নেতারা খাবার, পানি ও আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে।
জেলা বিএনপির নেতা শেখ রিয়াজ উদ্দিন রানা জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় তারা ব্যাকআপ ভূমিকা পালন করেছেন। পুলিশের চোখ এড়াতে হেলমেট পরে মিছিলে অংশ নিয়ে ছাত্রদের সাপোর্ট দিয়েছেন।
বিকেল তিনটার পর সাধারণ মানুষও যোগ দেয় আন্দোলনে। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ওইদিন রাত আটটা পর্যন্ত চলে এই গণজোয়ার।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আসমা আক্তার বলেন, “আমি মাঠে নামিনি, কিন্তু সারাদিন অনলাইন গ্রুপে তথ্য ও বার্তা আদান-প্রদানের দায়িত্ব পালন করেছি।”
রাতের আঁধারে ফেরার সময় ছাত্রলীগের ঘাতক বাহিনী শহরের স্বর্ণকার পট্টিতে আক্রমণ চালায় আন্দোলনের নেতা ফাহাদ শিকদার অপির ওপর।
তবে আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বলেন, এটাই প্রথমবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর ওপর পাল্টা আঘাত এসেছে। আজকের দিনটি পিরোজপুরবাসীর কাছে এক ‘ছাত্র-গণজাগরণের বিজয় দিবস’
পাঠকের মন্তব্য