নারী খেলোয়াড়দের আহ্বান: ‘আমাদের প্রাপ্যটা দিন’
২০২৫ সালের মধ্যে ৯২৫ মিলিয়ন ডলার সম্প্রসারণ ফি আদায়ের পথে; খেলোয়াড়রা বলছেন, আয় বাড়লেও বেতন বাড়ে না
বিশেষ প্রতিনিধি
নারী পেশাদার বাস্কেটবল লিগ WNBA সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩ দল থেকে বেড়ে ১৮ দলে রূপান্তরিত হবে। যুক্ত হবে নতুন পাঁচটি শহর—ক্লিভল্যান্ড, ডেট্রয়েট, ফিলাডেলফিয়া, টরন্টো ও পোর্টল্যান্ড।
এই সম্প্রসারণ পরিকল্পনার খবরে যেমন উচ্ছ্বাস রয়েছে, তেমনই আছে উদ্বেগ। কারণ, এই সময়েই চলছে WNBA খেলোয়াড়দের সঙ্গে লিগ কর্তৃপক্ষের কঠিন দরকষাকষি। খেলোয়াড় ইউনিয়ন চলতি সিজনের শেষে বর্তমান CBA (Collective Bargaining Agreement) বাতিল করেছে। ফলে একটি শ্রম বিরতির (lockout) সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
আয় বাড়লেও ভাগ বাড়ে না?
২০২৪ সালে WNBA-এর আনুমানিক বার্ষিক আয় ছিলো ২০০ মিলিয়ন ডলার, ১২টি দল নিয়ে। আগামী পাঁচটি দলের প্রতিটিকে দিতে হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সম্প্রসারণ ফি। ফলে ২০২৫-২০৩০ সময়ে মোট ৯২৫ মিলিয়ন ডলার আসবে লিগের কোষাগারে।
কিন্তু খেলোয়াড়রা পাচ্ছেন সেই আয়ের মাত্র ৯.৩%। যেখানে NBA খেলোয়াড়রা পান প্রায় ৫০%, NFL ও NHL খেলোয়াড়রা পান ৪৮-৫০%।
“আমরা শুধু ন্যায্য অংশ চাই,” বলেন মিনেসোটা লিনক্স তারকা নাফিসা কোলিয়ের। “আমরা যা আয় এনে দিই, তার সামান্য অংশও পাই না।”
অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণ: ‘এটা ভালো পদক্ষেপ’
অর্থনীতিবিদ ভিক্টর ম্যাথেসন (College of the Holy Cross) মনে করেন, এই সম্প্রসারণ খেলোয়াড়দের জন্য ক্ষতিকর নয়। “যদি পুরো ‘পাই’ বড় হয়, তাহলে প্রতিটি টুকরোও বড় হবে। নতুন দল মানেই নতুন মার্কেট, নতুন দর্শক, নতুন আয়।”
তিনি বলেন, “লিগ যদি ছোট শহরে যেত—লেক্সিংটন বা বার্মিংহ্যাম—তাহলে সমস্যা হতো। কিন্তু তারা যাচ্ছে NBA সমৃদ্ধ শহরগুলোতে।”
নতুন দল মানেই নতুন টিভি চুক্তি, স্পনসরশিপ, দর্শক
লিগ যত বেশি শহরে প্রবেশ করবে, মিডিয়া কাভারেজ ও স্পনসরশিপ তত বাড়বে। ESPN-এর মতো নেটওয়ার্ক বাধ্য হবে বেশি সম্প্রচার দিতে। জার্সিতে বিজ্ঞাপন, টিকিট বিক্রি, টিভি রেটিং—সবকিছুই বাড়বে।
খেলোয়াড়দের ভাষ্যে: ‘বেতনের কথা বললেই চাপ আসে’
কেলসি প্লাম, লাস ভেগাস অ্যাসেসের তারকা, বলেন:
“আমার জার্সি বিক্রি হয়, অথচ আমি একটা পয়সাও পাই না।”
ইউনিয়ন সভাপতি নেকা ওগউমিকে জানিয়েছেন, বর্তমান CBA-তে একটি শর্ত আছে—যদি নির্দিষ্ট রাজস্ব লক্ষ্য অর্জিত হয়, তবে খেলোয়াড়রা ৫০% পর্যন্ত আয় ভাগ পেতে পারে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা কখনোই পূরণ হয়নি, এবং এই তথ্য ইউনিয়ন জানতে পারে না।
কমিশনারের প্রতিক্রিয়া: ‘শ্রদ্ধা করি, শুনছি’
WNBA কমিশনার ক্যাথি এঙ্গেলবার্ট বলেন:
“২০২০ সালে আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, ২০২৫ সালে আমরা অনেক উন্নত অবস্থানে। আমি খেলোয়াড়দের শ্রদ্ধা করি এবং আমরা শুনছি। আমরা এমন একটি CBA চাই যা লিগকে আরও দশকের জন্য টিকিয়ে রাখবে।”
উপসংহার: আগামীর দিকনির্দেশনা
দল বাড়ছে, আয় বাড়ছে, জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। কিন্তু খেলোয়াড়দের দাবি, এই সবকিছুর মাঝেও তাদের আয়-অংশ ক্রমাগত অবহেলিত।
যদি নতুন CBA নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে ২০২৬ মৌসুমের শুরুতেই লিগে ‘লকআউট’ দেখা দিতে পারে—যা খেলোয়াড়, দর্শক এবং বাজার—সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।