![]()
দুবাইভিত্তিক সাবসন এনার্জি এফজেডসিওর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘সম্পদ ক্রয় চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল)। যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিক্রি বা উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুনরায় রফতানির ভিত্তিতে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করে।
এই নতুন চুক্তি কেপিসিএলের চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার আরেকটি বড় পদক্ষেপ। এর আগে কোম্পানিটি খুলনার খালিশপুরে থাকা ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেপিসি ইউনিট–২ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তুরস্কের আকসা এনার্জি ইউরেতিম এ এসের কাছে হস্তান্তরের জন্য সম্পদ বিক্রির চুক্তি করে।
বিশ্লেষকদের মতে, ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিক্রি বা হস্তান্তরের মাধ্যমে কেপিসিএল তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা এবং নগদ প্রবাহে স্থিতিশীলতা আনতে চাইছে।
লাভের ধারায় প্রত্যাবর্তন—আয় ও মুনাফায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি
অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) কেপিসিএলের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৫ পয়সা—যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৪ পয়সা।
এ উন্নতি সম্পর্কে কোম্পানির বক্তব্য, সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি এবং আয়ের ইতিবাচক প্রবাহ এই উন্নতির প্রধান কারণ।
সেপ্টেম্বর ২০২৫ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ২৭ পয়সায়।
গত পাঁচ বছরের আর্থিক পারফরম্যান্স—উত্থান-পতনের পরিবর্তনচিত্র
২০২৪–২৫ হিসাব বছর
-
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫% নগদ লভ্যাংশ
-
ইপিএস: ২৯ পয়সা (আগের বছর ১৫ পয়সা)
-
এনএভিপিএস: ১৯ টাকা ৩ পয়সা
২০২৩–২৪ হিসাব বছর
-
১০% নগদ লভ্যাংশ
-
ইপিএস: ১৫ পয়সা
-
আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান: ১ টাকা ৬৭ পয়সা
-
এনএভিপিএস: ১৮ টাকা ৩৪ পয়সা
২০২২–২৩ হিসাব বছর
-
১০% নগদ লভ্যাংশ
-
শেয়ারপ্রতি লোকসান: ১ টাকা ৬৭ পয়সা
-
আগের বছর ইপিএস: ৩ পয়সা
-
এনএভিপিএস: ১৯ টাকা ১৯ পয়সা
২০২১–২২ হিসাব বছর
-
১০% নগদ লভ্যাংশ
-
ইপিএস: ৩ পয়সা (আগের বছর ছিল ৮৭ পয়সা)
-
এনএভিপিএস: ২১ টাকা ৭৩ পয়সা
সংখ্যাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২২–২৩ এবং ২০২৩–২৪ হিসাব বছরের লোকসান উত্তরণ করে সাম্প্রতিক দুই বছরে কেপিসিএল আবার লাভের ধারায় ফিরে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিক্রি এবং সহযোগী কোম্পানির পারফরম্যান্স এই পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখছে।
কোম্পানির বিনিয়োগ কাঠামো—স্থির নিয়ন্ত্রণ উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে
কেপিসিএলের মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯। এর মধ্যে—
-
উদ্যোক্তা পরিচালক: ৬৯.৯৯%
-
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী: ৯.৪১%
-
সাধারণ বিনিয়োগকারী: ২০.৬০%
উচ্চ উদ্যোক্তা শেয়ারধারণ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ স্থিতিশীল থাকাকে নির্দেশ করে, যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য।
পুঁজিবাজারে দুই দশকের যাত্রা
১৯৯৭ সালে দেশের প্রথম স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেপিসিএলের যাত্রা শুরু। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি।
বর্তমানে কোম্পানির—
-
অনুমোদিত মূলধন: ৭০০ কোটি টাকা
-
পরিশোধিত মূলধন: ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা
-
রিজার্ভ: ৩৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা
কেন সম্পদ বিক্রি?—এক্সপার্টদের বিশ্লেষণ
শক্তি খাতের বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ—
-
প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ রফতানির সম্ভাবনা কমে যাওয়া
-
অপারেশন খরচ বৃদ্ধি
-
উন্নত নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজন
-
নতুন মডেলে ব্যবসা পরিচালনার কৌশল
এসব কারণে কেপিসিএল ধীরে ধীরে পুরোনো সম্পদ বিক্রি করে নতুন কৌশলগত অবস্থানে যেতে চাইছে।
বাজারে সম্ভাব্য প্রভাব
বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিক্রির এই চুক্তি শেয়ারবাজারে কেপিসিএলের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন চুক্তির ঘোষণা শেয়ারদরকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রাখে।
পাঠকের মন্তব্য