![]()
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর—এই ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির সময় নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এই পদক্ষেপটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং আগামী ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এলসি নীতির মূল বিষয়
মূলত, নগদ মার্জিন হলো আমদানির সময় ব্যাংকের কাছে জমা রাখা অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ। পূর্বে রমজান মৌসুমে কিছু ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখতে হতো, যা আমদানিকে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ করেছিল।
কিন্তু এই নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যাবে, যা বাজারে সহজ আমদানি নিশ্চিত করবে। এছাড়াও, ব্যাংকগুলোকে সংশ্লিষ্ট আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
এটি সরাসরি রমজান মাসে বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ততা এবং মূল্য সহনীয়তা বজায় রাখার দিকে লক্ষ্য রাখে।
হিউম্যানিটারিয়ান দিক
রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা সাধারণত উচ্চ থাকে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য। যদি আমদানির খরচ বেশি থাকে বা বাজারে সরবরাহ কম থাকে, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সরাসরি প্রভাবিত হয়।
নতুন নীতি অনুযায়ী:
-
নগদ মার্জিন কমানো হয়েছে, যার ফলে আমদানির খরচ কমবে
-
ব্যাংক এবং ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য প্রক্রিয়া সহজ হবে
-
বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হবে
-
ভোক্তাদের জন্য মূল্য স্থিতিশীল থাকবে
এই পদক্ষেপটি সরাসরি দেশের নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই উদ্যোগ দেশের বাজারে সরবরাহ, ক্রয়ক্ষমতা এবং অর্থনীতির তরলতা বৃদ্ধি করবে। নগদ মার্জিন কমানোর ফলে:
-
আয়াত্মক ও ক্ষুদ্র আমদানিকারকরা বাজারে প্রবেশ সহজ হবে
-
রমজান উপলক্ষে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি বৃদ্ধি পাবে
-
বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে
এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, বাজারের সুস্থতা এবং ভোক্তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।
নির্দেশনার আইনগত ভিত্তি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার অধীনে। এর ফলে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে অবশ্যই এই নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
এটি প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় নীতি ও ব্যাংকিং প্রক্রিয়া একত্রিত হয়ে জনগণের জন্য সরবরাহ সহজ করছে, বিশেষ করে সেই সময় যখন দেশের ভোক্তাদের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে।
ব্যাংকের বাস্তবায়ন ও তফসিলি ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে যে, ব্যাংকগুলো:
-
ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখবে
-
১০টি পণ্যের আমদানিতে প্রথম অগ্রাধিকার দেবে
-
বাজার পর্যাপ্ততা ও মূল্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে
এই উদ্যোগ দেশের ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস (FMCG) শিল্পের জন্য একটি বড় সহায়ক পদক্ষেপ।
উপসংহার
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা রমজান মাসে জনগণকে সুলভ ও পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য সরবরাহের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
-
নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখা
-
বাজারে পর্যাপ্ততা বজায় রাখা
-
মূল্য সহনীয় রাখা
সব মিলিয়ে এটি মানবিক ও অর্থনৈতিক দু’দিকই শক্তিশালী করবে।
এ ধরনের নীতি প্রমাণ করে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধুমাত্র আর্থিক নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং জনগণের জীবনমান ও ভোক্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পাঠকের মন্তব্য