![]()
রাস্তার একপাশে দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল শপিং মল—বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স। অন্যপাশে প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। অথচ জুতা কিনতে মানুষের ভিড় সেই ফুটপাতেই! স্থানটি রাজধানীর পান্থপথ।
দেখলে মনে হয় সামান্য কিছু দোকান, কিন্তু এখানেই বিক্রি হয় বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের খাঁটি চামড়ার জুতা—শোরুম দামের অর্ধেক দামে। ক্রেতাদের মতে, এখানকার পণ্য ‘এক্সপোর্ট কোয়ালিটি’, আর দাম হাতের নাগালে।
‘শোরুম নয়, এবার পান্থপথ!’
গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হোসেন এসেছেন একজোড়া ফর্মাল জুতা কিনতে। মাসের শেষ, টানাপোড়েন চলছে। শোরুমে ঘুরে এসেও হাত খালি। শেষমেশ থামলেন ফুটপাতেই।
১,৬০০ টাকায় কিনলেন একজোড়া ‘অক্সফোর্ড শু’। একপাশে সামান্য ভাঁজ থাকলেও তার মুখে হাসি, “এই জুতা শোরুমে ন্যূনতম চার হাজারে পেতাম না।”
ফুটপাতের জুতার উত্থান
কোভিড–১৯ পরবর্তী সময়ে এই অস্থায়ী মার্কেটটি ঢাকার চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দোকান আগেও ছিল, তবে ক্রেতাদের ভরসা অর্জন করে গত তিন–চার বছরে।
এক বিক্রেতা আব্দুল হোসেন বললেন, “এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির জুতা পাওয়া যায়। যে জুতা শোরুমে ৫–১০ হাজার, আমরা বিক্রি করি ২ হাজারে।”
ইপিজেড থেকে ফুটপাতে
জুতাগুলোর অনেকগুলো রপ্তানির জন্য তৈরি হয় ইপিজেড বা ফ্যাক্টরিতে। সামান্য ত্রুটি ধরা পড়লেই বিদেশি ক্রেতারা ‘রিজেক্ট’ করে দেন। সেসব জুতা পরে নিলামে বিক্রি হয়।
ফুটপাতের ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম রোডের কারখানা থেকে নিলামে কিনে আনি। এ–গ্রেড রাখি পান্থপথে, বি ও সি গ্রেড অন্য ফুটপাতে পাঠাই।”
শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের ভরসা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিটন ইসলাম বলেন, “ছাত্রদের তো ব্র্যান্ডের জুতা কেনার মতো বাজেট থাকে না। ১,২০০ টাকায় এখানে অরিজিনাল চামড়ার জুতা পাওয়া যায়—এটা তো আশীর্বাদ।”
বিক্রেতারা জানান, তাদের প্রধান ক্রেতা চাকরিজীবী ও তরুণ শিক্ষার্থীরা। নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম, কারণ এখানে মূলত পুরুষদের জুতাই বিক্রি হয়।
দাম ও মান
-
ফর্মাল জুতা: ১,৫০০–২,০০০ টাকা
-
লোফার: ১,০০০–১,৫০০ টাকা
-
বুট: ২,৫০০–৩,০০০ টাকা
জুতা চাইনিজ ও দেশীয় ব্র্যান্ডেরও আছে, তবে ক্রেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয় কোনটি এক্সপোর্ট আর কোনটি স্থানীয়।
শীতকাল মানেই ‘পিক সিজন’
ব্যবসায়ীরা জানান, শীতকালেই বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। গরমে যেখানে দিনে ২–৩ জোড়া জুতা বিক্রি হয়, শীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০–১২ জোড়ায়।
বিক্রেতা ইশরাক হোসেন বলেন, “শীতে রোজার মতো জমে ওঠে মার্কেট। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি থাকে টপে।”
ফুটপাত নয়, স্থায়ী ঠিকানা চায় ব্যবসায়ীরা
ফুটপাতের এই অস্থায়ী মার্কেট এখন কয়েকশ মানুষের জীবিকার উৎস। ব্যবসায়ীরা চান, সরকার যেন তাদের জন্য স্বল্পমূল্যে স্থায়ী মার্কেটের ব্যবস্থা করে।
তাদের বিশ্বাস, এতে ‘রিজেক্টেড’ পণ্যের এই বাজার আরও বড় ও সংগঠিত হতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য