![]()
আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার কারণে ডেঙ্গু এখন জনস্বাস্থ্যের এক ভয়ংকর আতঙ্ক। একসময় বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সারা বছরই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়নের ফলে এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে, ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এখন বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
ভ্যাকসিন আছে, তবে সীমাবদ্ধতা প্রচুর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য দুটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে— ডেঙ্গাভেক্সিয়া (Dengvaxia) এবং কিউডেঙ্গা (Qdenga)।
ফ্রান্সের সানোফি অ্যাভেন্টিজ উদ্ভাবিত ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ এবং জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস উদ্ভাবিত ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা বর্তমানে বেশ কিছু দেশে ব্যবহার হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে এখনো কোনো ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের সরকারি অনুমোদন নেই।
কেন অনুমোদন নেই?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোশতাক হোসেন বলেন,
“টিকার অনুমোদন দিতে হলে আগে রোগটিকে এপিডেমিক হিসেবে ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু সরকার সেটা করলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টিকাগুলোর বয়সসীমা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান,
“ডেঙ্গাভেক্সিয়া টিকা শুধু তাদের দেওয়া যায় যাদের জীবনে একবার ডেঙ্গু হয়েছে। আর কিউডেঙ্গা কেবল ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদিত।”
তাই বাংলাদেশে এর ব্যাপক প্রয়োগ এখনো বাস্তবসম্মত নয়।
বাংলাদেশে ট্রায়াল হয়েছে
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH) আবিষ্কৃত টিভি০০৫ (TV005) নামের একটি টিকার দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল চালানো হয় আইসিডিডিআরবি (icddr,b)-এর মাধ্যমে।
ভারতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে বাণিজ্যিক উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল, তবে এরপর প্রকল্পটি অগ্রগতি পায়নি।
বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু টিকার অবস্থা
সিডিসি’র (CDC) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় চারশ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে।
আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য আমেরিকায় ডেঙ্গু এখন মহামারির পর্যায়ে। ইউরোপ ও আমেরিকাও এর বাইরে নয়। তবু ভ্যাকসিন ব্যবহারে এখনো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বহু দেশ।
সচেতনতাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিজ নিজ বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, পানি জমতে না দেওয়া এবং মশারি ব্যবহারই ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল উপায়।
অধ্যাপক কবিরুল বাশারের ভাষায়—
“সরকারি অনুমোদন বা ট্রায়ালের আগে জনগণকেই সচেতন হতে হবে। কারণ পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে দ্রুত কমানো সম্ভব।”
মূল বার্তা
বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকা এখনো অনুমোদিত নয়, কারণ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা, বয়সসীমা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে টিকা নিয়ে গবেষণা চলমান। এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও মশা নিয়ন্ত্রণই এখন সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
পাঠকের মন্তব্য