বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এর গণভোট আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য গঠনের জন্য এক সপ্তাহের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলোচনা করে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দিক। সরকার আর কোনো আলোচনা আয়োজন করবে না।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান,
“দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সরকার সরকারের মতো অ্যাক্ট করবে।”
???? রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য সময়সীমা
অন্তর্বর্তী সরকারের এই ঘোষণা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকার মনে করছে, সময় এখন সিদ্ধান্তের—বিতর্ক বা বিলম্বের নয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো গত ১৫ বছর প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে কাজ করেছে। এবারও তারা নিজেদের আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
সরকার জানায়, কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই, কারণ উপদেষ্টা পরিষদ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে।
???? সরকার ‘অপেক্ষায়’, তবে প্রস্তুত সিদ্ধান্ত নিতে
উপদেষ্টা পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব দিলে সরকার গণভোট আয়োজনের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে। তবে দলগুলো যদি ঐকমত্যে না পৌঁছায়, তাহলে সরকার নিজস্ব নীতিগত অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত নেবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“আমরা অপেক্ষা করব। দলগুলো যদি সমন্বিত প্রস্তাব দেয়, সেটা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত করা হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই অবস্থান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা রাখার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের একটি ইঙ্গিত।
???? জুলাই সনদ ও গণভোট: এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের প্রহরগণনা
এর আগে ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ সরকারে জমা দেয়। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ত্রয়োদশ সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং জনগণের ভোটে অনুমোদিত হলে তা দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গণভোট কেবল সাংবিধানিক নয়, বরং জাতীয় ঐক্য ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনার সম্ভাবনা বহন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা সুলতানা বলেন,
“এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। যদি সব দল অংশ নেয়, জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।”
???? জনগণের চোখে এক আশার আলো
নাগরিক সমাজের অনেকেই বলছেন, এই প্রক্রিয়া কেবল রাজনীতি নয়—জনগণের কণ্ঠকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
একজন তরুণ ভোটার বলেন,
“আমরা চাই, দলগুলো নিজেদের স্বার্থ ভুলে একসঙ্গে বসুক। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই ঐক্যটাই সবচেয়ে দরকার।”
???? উপসংহার
জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক, আশঙ্কা ও আশা—সব মিলিয়ে এখন জাতি অপেক্ষা করছে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের। রাজনৈতিক দলগুলো কি একসঙ্গে দেশের ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণে এগিয়ে আসবে, নাকি বিভক্ত মতামতই নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করবে—সেই উত্তর মিলবে আগামী এক সপ্তাহেই।
পাঠকের মন্তব্য