দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে অনুষ্ঠিত এপেক সম্মেলনের প্রাক্কালে বৈঠক করলেন বিশ্বের দুই প্রভাবশালী নেতা—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই বৈঠক শুধু কূটনৈতিক দিক থেকেই নয়, অর্থনৈতিকভাবে নতুন মোড় এনেছে বিশ্ববাণিজ্যে।
দীর্ঘ টানাপোড়েন ও শুল্কযুদ্ধের পর এই বৈঠকে এসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করল, চীনা আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হচ্ছে। এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ফেন্টানিল সংকট মোকাবিলায় চীনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি।
এপেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা “নতুন অর্থনৈতিক ভারসাম্যের সূচনা” বলে অভিহিত করছেন। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসক্তি ইতিমধ্যেই এক মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে, যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত চীনা রাসায়নিক শিল্পের ভূমিকা। এই প্রেক্ষাপটে চীনের সহযোগিতার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ও মানবিক সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন,
“এটি ছিল অসাধারণ এক বৈঠক। শি জিনপিং একজন মহান নেতা। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হয়েছি।”
ট্রাম্প আরও নিশ্চিত করেন যে, শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি চীন বিপুল পরিমাণে মার্কিন সয়াবিন ক্রয় করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।
শি জিনপিংয়ের আগমন উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দরে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল। চীনা পতাকা হাতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সাজানো রাস্তায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন, যদিও নিরাপত্তার কারণে কোনো ধরনের বিক্ষোভের সুযোগ রাখা হয়নি।
এই বৈঠকের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে—দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বাস্তবতাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চীনা পণ্যের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চীনের রপ্তানি বাজার হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিহার্য। ফলে ফেন্টানিল সংকট থেকে শুরু করে বাণিজ্যযুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই উভয় দেশের সহযোগিতামূলক অবস্থান বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন দিশা দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
“ট্রাম্প এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শুধু রাজনৈতিক বার্তাই দেননি, বরং মানবিক ইস্যুকেও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছেন।”
এদিকে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই এশিয়া সফরের ইতি টেনে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। অপরদিকে শি জিনপিং অংশ নিচ্ছেন আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া এপেক নেতাদের মূল শীর্ষ সম্মেলনে, যা ১১ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্বের চোখ এখন গিয়ংজুর দিকে—দেখার বিষয়, এই বৈঠক ভবিষ্যতের ভূরাজনীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যে কতটা প্রভাব ফেলে।
পাঠকের মন্তব্য